না-মেয়েলি কথা


নাতাশা স্টট, সেনেটর, ডেমোক্র্যাট; ক্যারল ব্রাউন, সেনেটর, লেবার; জুডিথ ট্রোথ, সেনেটর, লিবারাল; কেরি নেটল, সেনেটর, গ্রীন। অস্ট্রেলিয়ার এই মহিলা সেনেটররা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতাকে সরিয়ে রেখে আপাতত: একজোট দুটি বিলের সমর্থনে।
অ্যাবরশন পিল RU 486 এর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য একটি বিল, অন্যটিতে প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিংএর বিজ্ঞাপনে সত্যভাষণের দাবী।
চারটি মেয়ে, দুটি বিল-বিষয় অ্যাবর্শন। নিছক মেয়েলি প্রসঙ্গ? আসুন, দেখা যাক।

অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট লাইব্রেরির ইন্টারনেটলভ্য কাগজপত্র ঘেঁটে জানা যাচ্ছে - RU 486 এর পোশাকী নাম Mifepristone । এক ধরনের স্টেরয়েড। ব্যবহতৃ হয় মেডিক্যাল অ্যাবর্শনের জন্য। সার্জিকাল টারমিনেশনের বিকল্প। প্রোজেস্টেরনের কাজ বন্ধ করে দেয় এই ওষুধ, ফলে জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বাণু ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ন'সপ্তাহের মধ্যে এই ড্রাগ ব্যবহার করা যায়। ডাক্তার RU 486 এর ডোজ বলে দেবেন, ওষুধ নেওয়ার দুদিন পরে সংশ্লিষ্ট মহিলাকে আবার আসতে হবে ডাক্তারের কাছে, ডাক্তার প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন দেবেন, তারপর বাকিটা "মাচ লাইক আ স্পন্টেনিয়াস অ্যাবরশন।' পশ্চিম ইউরোপ, ইউ এস এ, ইউ কে, রাশা, চিন, ইজরায়েল, টার্কি, নিউজীল্যান্ড আর টিউনিশিয়ায় প্রচলিত RU 486 । সেখানে সমীক্ষা করে দেখা গেছে মোটামুটি ৯২-৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে এই RU486 / প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন কম্বিনেশন সফল। বাকি ক্ষেত্রে সার্জেনের দরকার হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহিলাটিকে জরুরী ভিত্তিতে মেডিকেল কেয়ারে নিতে হয়েছে ইন্টারনাল ব্লীডিং আর ইনফেকশনের জন্য।
এখন অস্ট্রেলিয়াতে RU486 এর লেজিস্লেটিভ স্ট্যাটাসটা কি দেখা যাক। প্রকৃতপক্ষে, থেরাপিউটিক গুডস অ্যাক্ট অনুযায়ী ,অস্ট্রেলিয়ায় RU486 "রেস্ট্রিকটেড গুড-হুইচ ক্যানট বি ইভ্যালুয়েটেড, রেজিস্টার্ড, লিস্টেড অর ইম্পোর্টেড উইদাউট দ্য রিটেন অ্যাপ্রুভাল অফ দ্য মিনিস্টার অফ হেল্থ।' RU486 এর এই 'রেস্ট্রিকটেড গুড' হওয়ার গল্পটা হ'ল: ১৯৯৬ সালে তত্কালীন সেনেটর ব্রায়ান হার্ডিন RU486 -ব্যবহারের কুফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সারভিকস ও ইউটেরাস টিসুর ওপর এই ড্রাগের প্রভাব নিয়ে কথা ওঠে। ফলস্বরূপ আসে হারডিন অ্যামেন্ডমেন্ট যা তত্কালীন লিবারাল গভর্মেন্ট আর বিরোধী লেবারের সমর্থন পেয়ে যায়। RU486 নিয়ে এখনকার যে বিতর্ক, সেখানে, মেডিক্যাল অ্যাবর্শনের সমর্থকরা বলছেন, এক্ষেত্রে অ্যানেশথেশিয়া লাগে না, সারভিকসে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইত্যাদি। এসব তো টেকনিকাল কথাবার্তা। যথারীতি এর বিপক্ষেও উত্তর মজুদ। টেকনিক্যাল। এইসব টেকনিক্যাল কচকচিকে সরিয়ে রেখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য বিল সমর্থকদের: কোন্ পদ্ধতি বেশি ভালো সেটা বড় কথা নয়, কথা হ'ল, মেয়েরা অন্তত: জানুক দু রকম পদ্ধতিই আছে, তারপর চিকিত্সকের সাহায্যে বেছে নিক কোন একটি। না জানাটা কাজের কথা নয়।

এই বেছে নেওয়ার সুযোগের প্রশ্নই উঠে এসেছে দ্বিতীয় বিলটির ক্ষেত্রেও। অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং এজেন্সি আছে। সরকার নিজেই এবছর প্রায় ৫০ মিলিয়নের এক প্রকল্প চালু করতে চলেছে এব্যাপারে। এছাড়াও আছে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অফ প্রেগনেন্সি সাপোর্ট সার্ভিসের ছত্রছায়ায় অন্তত: ৩০টি কাউন্সেলিং সংস্থা আর বাকিরা প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং অস্ট্রেলিয়া পরিচালিত যেটিকে রাইট টু লাইফ নামের একটি সংস্থা অর্থকরী সাহায্য দেয়। এই সমস্ত সংস্থার আপাত: নিহিত নীতিটি গর্ভপাত বিরোধী। সব কটি সংস্থার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যখনই কোনো মহিলা অপরিকল্পিত মাতৃত্বের বিষয়ে পরামর্শ নিতে এদের দ্বারস্থ, এরা প্রথমেই অযাচিতভাবে গর্ভপাত বিরোধী প্রচার শুরু করেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে একটি মেয়ে জানালেন , " উই ওয়ার টোল্ড আই উড বী অ্যাট হাই রিস্ক অফ গেটিং ব্রেস্ট ক্যানসার ইফ আই হ্যাড অ্যান অ্যাবরশন, দ্যাট আই কুড বিকাম ইনফারটাইল, অ্যান্ড দ্যাট আই উড বি সাইকোলজিকালি ট্রমাটাইজড।'
সরকারের এই যে ৫০ মিলিয়নের প্রকল্প সেখানে দুটি ক্যাথলিক এজেন্সির যুক্ত হওয়া এই গর্ভপার-বিরোধী নীতিরই ইঙ্গিত দেয়। গর্ভপাতের হার দেখে যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোনো রাখ ঢাক না করেই বলেন-ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি, সেখানে, সরকারের এই প্রকল্প মূলত: গর্ভপাত কমানোর দিকেই মনোযোগী হবে-সন্দেহ নেই।
যে বিলটির প্রসঙ্গে এত কথা এল তার দাবী হ'ল প্রতিটি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং সংস্থার বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট লিখতে হবে "হোয়েদার দে প্রোভাইড রেফের‌্৯AFাল্স ফর অ্যাবরশন। অবশ্যই প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং সংস্থার নিজস্ব নিয়ম, নীতি থাকবে। থাকতেই পারে। বিলটি কোন জোরাজুরি করছে না তাদের গর্ভপাত বিরোধী নীতি থেকে সরে আসতে। গর্ভপাত ভালো কি মন্দ, নৈতিক কি অনৈতিক-তা আদৌ বিচার্য নয় এই ক্ষেত্রে। বিলটির বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার: "উইমেন মাস্ট নট বি মিসলেড বাই দিজ এজেন্সিজ অ্যাডভারটাইজিং ইনটু আ ডিসপ্যাশনেট হিয়ারিং অন অল থী অপশনস-পেরেন্টি,ং অ্যাডপশন, অ্যান্ড অ্যাবরশন-ওনলি টু গেট মিসইন্ফরমেশন অর আ সারমন।' এও সেই "সাপোর্টিং উইমেন ইন দেয়ার চয়েসেস।' আগের বিলটির মতই। সমস্ত পন্থাগুলি যেন নিরপেক্ষভাবে জানানো হয় মেয়েদের। অথবা জানানো যে আদৌ হবে না-সংস্থার বিজ্ঞাপনে তাও যেন ঘোষিত হয়। তারপর বেছে নিক তারা।

চারটি মেয়ে, দুটি বিল, একটিই দাবী। একটি অধিকারের দাবী। গর্ভের অধিকারকে ছাপিয়ে উঠছে বেছে নেওয়ার অধিকার। ঠিক এইখানে, দুটি বিলের প্রসঙ্গ আর নিছক মেয়েলিকথা হয়ে থাকছে না।



জুলাই ৮, ২০০৭

Comments

Popular posts from this blog

চরাচরের পাখিরা

কোলক্লিফ, ২০২৩

সলস্টিস