রণক্ষেত্রের বাইরে অথবা ভিতরে
'দ্য মোস্ট ভায়োলেন্ট প্লেস অন আর্থ আউটসাইড আ কমব্যাট জোন'-অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের পাম আইল্যান্ড।১৯৯৯-এর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী। এখানে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস।জনসংখ্যা সাড়ে তিনহাজার চারহাজারের মত।শতকরা পঁচানব্বই শতাংশ কর্মহীন।গড়ে পনেরজন মানুষ পিছু বসত একখানি-মাথার ওপর ছাদটুকুও এতটাই অপ্রতুল।মারাত্মক সব অপরাধ ঘটে চলে প্রতিনিয়ত।বেশিরভাগই মদ্যপানজনিত অপরাধ।পাম আইল্যান্ডের ইতিহাস বিশ্লেষণ ক'রে অপরাধবিদরা এর রুগম্ভীর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন; এক কথায়, 'ডেসট্রাকশান অ্যান্ড ডিজর্গানাইজেশন অফ ট্র্যাডিশনাল সোসাইটি দ্যাট অ্যাকম্পানিড হোয়াইট সেটলমেন্ট অ্যান্ড কনকোয়েস্ট।'
একজন বহিরাগত যেভাবে জানে, যতটুকু জানতে পারে সেভাবেই জেনেছি পাম আইল্যান্ডের গোড়ার কথা। এই দ্বীপের নামটি ক্যাপ্টেন কুকের দেওয়া; সেই সময় ওখানে থাকতেন শ দুয়েক আদিবাসী - মনবরা গোষ্ঠীর।কাছাকাছির মধ্যে ছিল মিশন বীচের সরকারী আদিবাসী প্রকল্প। একটি সাঙ্ঘাতিক সাইক্লোনের পরে সরকারের তরফ থেকে মিশন বীচের জনগোষ্ঠীকে সরিয়ে আনা হয় পাম আইল্যান্ডে।
এরপর থেকে পাম আইল্যান্ড মোটামুটি আদিবাসীদের পেনাল সেটলমেন্ট হয়ে উঠতে থাকে - শুধু আদিবাসীরাই কেন বা ঠিক কি ধরণের অপরাধে সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে এই দ্বীপে রাখার দরকার হয়-সে নিয়ে ধোয়াঁশা রয়েই যায় যদিও।অথবা ধোঁয়াশা নয়।জানা কথা।
এরপরে যৌনরোগাক্রান্ত এবং কুষ্ঠরোগীদের পাম আইল্যান্ডে পাঠানো শুরু হয় সরকারের পক্ষ থেকে। হ্যা,ঁ শুধুই আদিবাসীদের।
এবং তথাকথিত আরোগ্যের পরে। পাম আইল্যান্ডের ভয়াবহ অবস্থার কারণ খুঁজতে গেলে এই সামান্য তথ্যই বোধ হয় যথেষ্ট।
অ্যাবোরিজিনাল প্রটেকশন এবং রেস্ট্রিকশন অফ দ্য সেল অফ ওপিয়াম অ্যাক্টকে শিখন্ডী খাড়া করে মানবাধিকার লংঘন হতে থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে চলে আসেন সরকারী আমলাগণ।এই হ'ল গোড়ার কথা।
বছর দুই আগে, পাম আইল্যান্ডের বাসিন্দা মুলুরুনজি দুমাদগী পুলিশচৌকিতে মারা যান। ঘটনার জন্য পুলিশকে সরাসরি দায়ী করে ক্রুদ্ধ জনতা চৌকি ও সরকারী অফিসে আক্রমণ চালায়। বেশ কিছুদিন প্রচন্ড গন্ডগোল চলে।কাগজপত্রে লেখালেখি হয় প্রচুর। ভায়োলেন্স আস্তে আস্তে থিতিয়েও যায়। কিন্তু আসল লড়াইটা চলতে থাকে।কাগজের হেডলাইন না হয়ে।
২০০৬ শেষ হওয়ার ঠিক আগে মৃত মুলুরুনজি আবার খবরের শিরোনামে চলে আসেন।করোনার ক্রিস্টিন ক্লেমেন্টের রিপোর্টে সিনিয়র সার্জেন্ট ক্রিস্টোফার হার্লেকে সরাসরি দায়ী করা হয় আর পুলিশকে অভিযুক্ত করা হয় তদন্তে গাফিলতির জন্য।করোনার আরো বলেন, ঘটনার দিন মুলুনজি গ্রেফতার হওয়ার মত কোন অপরাধই করেন নি।
সঙ্গে সঙ্গে কুইন্সল্যান্ডের পুলিশ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট করোনারের রিপোর্টকে মাতালের সাক্ষ্যনির্ভর বলে কড়া সমালোচনা করেন। আরো দু'কদম এগিয়ে ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশন লিয়ন ক্লেয়র বলেই দেন -এই রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সার্জেন্টের বিরুদ্ধে কোনই চার্জ আনা যাবে না।
এইবারে প্রচন্ড গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। আদিবাসী নেতা নোয়েল পিয়ারসন আর ফেডের্৯AFাল লেবার প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন মানডাইনের নেতৃত্বে বিশাল র্৯AFালি বেরোয়। কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার পিটার বেটি কার্যত ঘেরাও হয়ে থাকেন।প্রথমটায় বেটি পাম আইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি মাল্টি মিলিয়ন ডলারের ডাইভার্শন সেন্টারের টোপ দেন। 'উই ডোন্ট ওয়ন্ট টু বি ব্রাইবড'-উত্তর আসে।
এই বিক্ষোভের দিন দুই পরে পিটার বেটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক প্যাট শেনেহানকে ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশনের সিদ্ধান্তটি খতিয়ে দেখবার দায়িত্ব দেন।
এইখানে পিটার বেটি আবার একটা চালাকি করেন। লিয়ন ক্লেয়র যখন ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশন নিযুক্ত হ'ন সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্যানেলে ছিলেন এই বিচারপতি শেনেহান-ইউন্যানিমাস ডিসিশন হয়েছিল -সেই শেনেহানকে দিয়েই লিয়নের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বিচারের দায়িত্ব দেওয়া- প্রহসনটি ধরে ফেলেন পাম আইল্যান্ডের মানুষ। শেষ খবর পাওয়া অবধি যা জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন-বেটিকে বলা হয়েছে কুইন্সল্যান্ডের বাইরের কাউকে এই তদন্তের ভার দিতে।
সিভিল লিবার্টিস লইয়র টেরি বলছেন, 'দ্য পারসেপশন ইন দ্য আইজ অফ মেনি অ্যাবরিজিনাল কমিউনিটি ইজ দ্যাট দ্য লিগাল, পোলিস, পোলিটিকাল অ্যান্ড জুডিশিয়াল এলিট ইন দিস স্টেট আর সিম্পলি ক্লোজিং র্৯AFাংকস অন দিস ইস্যু।পারসেপশন হ্যাজ বিকাম রিয়ালিটি ইন দ আইজ অফ মেনি পিপল অন পাম আইল্যান্ড অ্যান্ড ইন দ্য অ্যাবরিজিনাল কমিউনিটি: দ্যাট দেয়ার ইজ ওয়ান স্ট্যান্ডার্ড অফ জাস্টিস হোয়েন অ্যাবরিজিনাল পিপল আর অ্যাকিউজড, অ্যান্ড অ্যানাদার স্ট্যান্ডার্ড হোয়েন অ্যাবোরিজিন্স আর দ্য কমপ্লেন্যান্টস।'
এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, প্রশাসন যতই অস্বীকার করুক,মুলুনজির মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিটি ঘটনায় তা দগদগে হয়ে ফুটে বেরিয়েছে ।মুলুনজির মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযুক্ত সার্জেন্ট হারলের বন্ধু অফিসারদের। একসপ্তাহ পরেই তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন 'অ্যাক্সিডেন্টাল ফল ' থেকেই এই মৃত্যু।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের পরে , এই প্রশাসনিক প্রহসনের মধ্যে দিয়েও শেষ অবধি জন হাওয়ার্ডের এই যে নির্দেশ-একটি পূর্ণাঙ্গ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ-যদিও সময় লাগল অনেক-সম্ভব হ'ল পাম আইল্যান্ডের মানুষের ক্রমাগত লড়াইএর জন্যই।
ওঁরা এখন অপেক্ষা করছেন তদন্ত রিপোর্টের। এরপর সুপ্রিম কোর্টে যাবেন জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য।
এদিকে, নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হবার মুখেই গতকাল, আচমকাই মারা গেলেন বছর চব্বিশের প্যাট্রিক ব্রমওয়েল, সেদিন পুলিশচৌকিতে মুলুনজির সেলমেট। অন্যতম প্রধান সাক্ষী।গতকাল তাঁর মৃতদেহটি পাওয়া যায় বাড়ীর উঠোনের একটি গাছে । ঝুলন্ত। আত্মহত্যা?
এই বহিরাগতর কাছে পরিস্থিতি তাই অত্যন্ত দুরূহ ঠেকে। অথচ,পাম আইল্যান্ডের মানুষ সহজেই বলেন,'উই'ল কীপ ফাইটিং দিস। ইউ হ্যাভ সীন আওয়ার কমিউনিটি। উই হ্যাভ নাথিং টু লুজ'।
।।।।পাম আইল্যান্ডের আকাশে মেঘের পরে মেঘ। মাঝরাত্তিরে উঁকি দিয়ে যায় চাঁদের কাস্তে। ধারালো। শাণ পড়েছে কখন যেন। কমব্যাট জোনের' বাইরে সবচেয়ে বিপদজনক এলাকাটি রণভূমি হয়ে যায়।
Comments
Post a Comment