পিঁপড়ে ...



কোন কোন দিন এমন হয়।

হয়তো শাওয়ারের তলায়। চোখ বোজা।জল পড়ছে। কেউ যেন ডাকল আমার নাম ধরে। চেনা গলায়।কোন্দিকে কার্টেন, কোথায় টাইলস -হাতড়ে বেড়াই। সাবানের ফেনা ছুঁয়ে থাকে পা।সর্বাঙ্গ ঘিরে অঝোরে জল আর মৃত্যুভয়।বাষ্পে ভরা স্নানঘর। ধোঁয়া ধোঁয়া।

অথবা, ডেস্কটপ সেন্টিফিউজ। হিমঠান্ডা। এপেনডর্ফগুলি পাক খায়। মিনিটে পাঁচহাজারবার।তিরিশ সেকেন্ড।
ঘূর্ণনশেষে, সুপারনেট্যান্ট চলে যায় সিঙ্কে। এপেনডর্ফের তলদেশে জমে থাকে প্রাণকণিকা। ডি এন এ। সাদাটে। আঠালো।
র‌্৯AFাকগুলি ভরে ওঠে এপেনডর্ফে। আমার চারদিকে থিতোনো প্রাণ।আতঙ্কে ছুঁড়ে ফেলি অ্যাপ্রন।

কিম্বা ট্র্যাশ ফেলতে যাই। কাঁচের ওপর কাঁচ । শব্দ ওঠে। মিলিয়ে যায়।লম্বা একটা গাছ।নিস্তব্ধ রাত।মরাচাঁদের ওপর ভেসে যায় মেঘ।

এই দিনগুলো রোজ আসে না।যখন আসে, থেকে যায়।কুঁকড়ে রাখে।
আমি খুঁজে বেড়াই মৃত্যুচিহ্নহীন দিনগুলি রাতগুলি। মৃত্যুসংবাদহীন খবরের কাগজ।মৃত্যুদৃশ্য বিরহিত মুভি। মৃত্যুবর্ণনাহীন উপন্যাস। শবযাড়ী বর্জিত পথসকল।

একটা খেলার মতো।হেরে যাওয়া খেলা। রোজ রোজ জিততে চাওয়া।রোজ রোজ হারা।
যেমন বাসস্টপে পৌঁছনোর আগেই অবশ্যম্ভাবী চলে যায় বাসটি।একা দাঁড়িয়ে থাকি।
সিমেন্ট বাঁধানো বাসস্টপের সামনেটুকু, ঘাসজমি শুরু তার পর থেকে। বাসস্টপের কাছ বরাবর ঘাসের সংখ্যা কমে এসেছে। উচ্চতাও।
বাসস্টপে হাল্কা শেড। একটি সবুজ বেঞ্চ।নিয়ন সাইন।সামনে বহমান ট্র্যাফিক।
এই সময় পিঁপড়েটি হেঁটে আসে।ঘাসজমি পেরিয়ে। একটি দুটি ড্যান্ডেলায়ন, সিগারেটের খালি প্যাকেট, তোবড়ানো কোকের ক্যান, চকোলেটের র‌্৯AFাপার পেরিয়ে সে আসতে থাকে। মোচড়ানো স্ট্রয়ে উঁকিঝুঁকি দেয়। সামান্য থামে। শুঁড় বুলিয়ে নেয় শাণবাঁধানো চত্বরে। তারপর উঠে আসে।
কালো পিঁপড়েটি। একা।
কার্বের দিকে এগোয় গুটিগুটি। থামে। শুঁড়টি তোলে। সামান্য থমকে পাশ কাটায় আমার জুতো, ঝরা পাতা, ছেঁড়া টিকিট,নুড়ি আর শুকনো ঝুরো মাটি।
কার্ব ঘেঁষে হাইড্র্যান্ট-জালের ঝাঁঝরি। পিঁপড়েটি হেঁটে যায় জালদন্ড বরাবর। সার্কাসের রোপ ওয়াকিং যেন। সামান্য হাওয়া দেয় হঠাত্। পিঁপড়ে এঁটে থাকে আধসেন্টিমিটার লোহার জালে।টলে পড়ে না।শুঁড় বুলিয়ে পরখ করে সামনের পথটুকু।এগোয় আবার।
ট্র্যাফিক সিগনাল গ্রীন হয়। হু হু ছোটে গাড়ীগুলি।
হাওয়ার দমকে উড়ে যায় আমার পিঁপড়ে।
উল্টোদিকে।বাঁধানো চত্বরে।নড়ে না।কিছুক্ষণ।
তারপর ঝুরো মাটি পেরিয়ে কার্বের দিকে এগোতে থাকে। আবার শুঁড় বোলায় বাঁধানো চাতালে, দু-তিনবার। কার্ব বেয়ে নামে। আবার পেরোয় লোহার জাল। সন্তর্পণে। রাস্তায় নামে। রেড সিগনালে পথ ট্র্যাফিকহীন।পিঁপড়েটি এগোয়।পিঁপড়ে আমার।
অত:পর, সমস্ত হাওয়া স্তব্ধ হয়। সিগনালের আলো বদলায়। ধেয়ে আসে যানগুলি।
আমি দেখতে পাই তীব্রগতি গাড়ীর চাকা,একের পর এক , বিরামহীন। ধূসর অ্যাসফল্ট। একটি কালো বিন্দু। আমার পিঁপড়েটি।
বাসস্টপ থেকে নেমে আসি। ঝাঁঝরির জালের ওপর আমার পা। সিগনাল সবুজ। ট্র্যাফিকের স্রোত বইছে।

শাওয়ারে জল ঝরে যায়।কোল্ড সেন্টিফিউজে ঘুরতে থাকে এপেনডর্ফসমূহ। ট্র্যাশক্যানের ওপর মরাচাঁদের আলো।
নির্জন একক বাসস্টপ। পিঁপড়েটি রাস্তা পার হতে থাকে।।

Comments

Popular posts from this blog

চরাচরের পাখিরা

কোলক্লিফ, ২০২৩

সলস্টিস