হলদে কেকের রাস্তা
"ফলো দ্য ইয়েলো ব্রিক রোড'-ডরোথি,কাকতাড়ুয়া, টিনের সেপাই, সিংহমশাই সবাই হাঁটছেন ইয়েলো ব্রিক রোড ধরে, এই গানখানি গাইতে গাইতে। পথের শেষে সব পেয়েছির দেশ-সব্বার মন:স্কামনা পূর্ণ হবে অজ দেশের উইজার্ডের জাদুদন্ডের ছোঁয়ায়। গন্তব্যে পৌঁছে অবশ্য মিথগুলি ভেঙে যেতে থাকে।।।
বছরকয়েক আগের টাইম পত্রিকায় প্রায় এই লেখার মতই শিরোনাম ছিল একটি আর্টিকেলের।মনে পড়লো।তবু হেডিং বদলাতে ইচ্ছে হ'ল না।আসলে, ইয়েলো কেকের সমস্ত গল্পেই ইয়েলো ব্রিকের গানটাই থিম সঙ।
গত এপ্রিলে চাইনিজ প্রিমিয়ার ওয়েন জিয়াবাও আর অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার জন হাওয়ার্ড একটি চুক্তি সাক্ষর করেছেন;চীনদেশে অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম বিক্রির পথ সুগম করার লক্ষ্যে।ক্যানবেরায়, দু দেশের সরকারের দীর্ঘ আলোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা হয়েছে-খবরে প্রকাশ।নিউক্লিয়ার এনার্জির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও আদানপ্রদান তার মধ্যে অন্যতম।
চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে -যে ইউরেনিয়াম তারা কিনবে তা শুধুই এনার্জি উত্পাদনে ব্যবহার হবে, অস্ত্র তৈরীর কাজে নয়।চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার করপোরেশনের জেনেরাল মানেজার কাং রিক্সিন বলেছেন , ২০২০ সাল বরাবর চীনে নিউক্লিয়ার এনার্জির ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হবে, অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেবে সেক্ষেত্রে। আর তুমুল গদগদ দেখাচ্ছে ওয়েনকে-" We believe that countries which are allied with United States can also be China's friends, and Australia is one of them '।
খবরের কাগজের প্রথম পাতায় হাসিমুখ, করমর্দনরত নেতাদের ছবিকে এই মুহূর্তে জুম আউট করে, আমরা ফ্ল্যাশ ব্যাকে যাই।
বিশ্বের যতেক ইউরেনিয়ামের চল্লিশ শতাংশই অস্ট্রেলিয়ায়।এই সময়ে, এ'দেশে তিনটি খনি কার্যকরী , এছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউরেনিয়ামের ভাঁড়ার চিহ্নিত করা আছে। খনিগুলি বেশ কুখ্যাত বলা চলে-রিও টিন্টোর মালিকানায় রেঞ্জার খনিটি কুনজিম্বা আর মাগেলা ক্রীকের জলে অনেক বিষ ঢেলেছে এখনও অবধি।জেনেরাল অ্যাটমিকসের বেভারলি খনিতে চলে বিতর্কিত ইন-সিটু লীচি,ং প্রবল দূষিত অ্যাকোয়াফারটি পরিষ্কারের কোনো পরিকল্পনা ম্যানেজমেন্টের নেই-" pollution will attenuate '-সাফ কথা তাদের।মাইনিংজায়ান্ট বি এইচ পি -বিলটনের খনি ওলিম্পিক ড্যাম থেকে আজ অবধি ষাট মিলিয়ন টন টেইলিং ওয়েস্ট -অন সাইটেই রাখা - এ'নিয়ে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনাই নেই। কয়েকবছর আগে একবার পার্লামেন্টারি এনকোয়ারি রিপোর্টে ধরা পড়েছিল পাঁচ ট্রিলিয়ন লিটার লিকুইড টেইলিং ওয়েস্টের এক লিকেজ।অন্য একটি রিপোর্টে ঐ অঞ্চলে অজস্র পাখির মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছিল খনিটিকে।
১৯৭৫এ অস্ট্রেলিয়ার তত্কালীন প্রাইম মিনিস্টার ইউরেনিয়াম খনিগুলির পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে এক কমিশন গড়েন। সেই কমিশনে রেঞ্জার খনি অঞ্চলের আদিবাসীরা বলেছিলেন," uranium mining has completely upturned our lives-bringing a town, many non-aborigial people, greater access to alcohol and arguments between us-mostly about money....Uranium mining has also taken our country away from us and destroyed it-billabongs and creeks are gone forever, there are hills of poisonous rock and great holes in the ground with poisonous mud... '
তারপর, শান্তিপূর্ণ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজার সাতাত্তরে ঘোষণা করলেন কয়েকটি সেফগার্ড-- পরবর্তীকালে বাণিজ্যিক কারণে এর কোনটি-ই টেঁকে নি। যেমন সাতাত্তরেই, এন পি টিতে সাক্ষর না করা ফ্রান্সকে ইউরেনিয়াম বিক্রি অনুমোদন করা হয়েছিল কিম্বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি অনুমোদিত ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইডের বদলে ইউরেনিয়াম অক্সাইড শিপিং শুরু হয়ে গিয়েছিল।আশির দশকে, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার আগেই কনট্র্যাক্ট নিগোশিয়েট করা হয়েছে বহুবারই এমনকি অস্ট্রেলিয়ান জুরিসডিকশনের বাইরে অফশোর ওয়ারহাউজ থেকেও ইউরেনিয়াম বিক্রি অনুমোদিত হয়েছিল। এসমস্তই ম্যালকম ফ্রেজারের সেফগার্ড বিরোধী।ছিয়াশি সালে ঘোষিত হল প্রিন্সিপ্যল অফ ইকুইভ্যালেন্স - অর্থাত্, অস্ট্রেলিয়ান ইউরেনিয়াম অন্যভাবেও ব্যবহার করা যাবে যদি সমপরিমাণ ইউরেনিয়াম শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার হয়।
প্রত্যেক সরকারই একই কাজ করেছে। এখন হাওয়ার্ডের সরকারও সেই পথেই পা বাড়াবে তাতে আর আশ্চর্য্যের কি? চীনের সঙ্গে এই চুক্তির পরে প্রিমিয়ার ওয়েনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- মেনে নেওয়া গেল যে অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম দিয়ে চীন অস্ত্র বানাবে না, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ইউরেনিয়াম আসায় চীনের নিজস্ব ইউরেনিয়াম দিয়ে অস্ত্র বানানোর পথ প্রশস্ত হল না কি?
বলাই বাহুল্য প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়া হয়।সেই সময়, তাইপেই টাইমসের মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য - " Whether or not Aussie uranium goes directly into Chinese warheads-or whether it is used in power stations in liu of uranium that goes into Chinese warheads-makes little difference. '
এবার আমরা আবার ফিরে আসছি খবরের কাগজের প্রথম পাতার ছবিটিতে-নেতারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে-হাস্যমুখ, করমর্দনরত। আর আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে, রেঞ্জার খনি অঞ্চলের সেই আদিবাসী মহিলার কথা-" None of the promises last but the problems always do '।
কেউ কথা রাখেনা।
Comments
Post a Comment