যতদূরেই যাই
সে বড় সহজ সময় ছিল না। বাতাসে বারুদের গন্ধ মেলায় নি তখনও। বাংলাদেশ সদ্যোজাত।
বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ প্রস্তর-মস্তক হারাচ্ছেন ক্ষণে ক্ষণে, নতুন করে পাওয়ার জন্য নয়।
আমাদের উত্তর শহরতলীতে শিশুরাও পরিচিত বোমা, পাইপগানের গঠনে; নিষিদ্ধ শব্দরাজিতে যুক্ত হচ্ছে লাশ,পার্টি, নকশাল এবং চারুবাবু।
এমত সময়ে, লাল স্কার্ট, সাদা জামা, লাল রিবনে ভগ্নীদ্বয় শুরু করেছি স্কুলে যাওয়া। রিকশপথ জুড়ে দেখতে থাকি রেললাইনের পাশের বস্তি, বাংলাদেশী উদ্বাস্তু ভিখারিনী, যশোর রোডে বাসে থ্যাঁতলানো কুকুর,অজস্র দেওয়াল লিখন যা নিষিদ্ধধ্বনিমাধুর্যে আমাদের মুখস্ত; কুমোরপাড়ার খড়ের কাঠামো দেবদেবীদের অলৌকিকত্ব সম্বন্ধে আমাদের মোহমুক্ত করে।
পাড়া ও পথের যাবতীয় কুশ্রীতা, যতেক অনলৌকিকত্ব আমাদের স্কুলের দেওয়ালে ধাক্কা খায়, প্রবেশের পথ পায় না। প্রাচীন স্কুলবাড়ী, সবুজ লোহার গেট, জামরুল গাছের তলায় ফোল্ডিং চেয়ারে সস্ত্রীক বাহাদুর দ্বাররক্ষী, প্রশস্ত পথে সবুজ স্কুল বাস দাঁড়িয়ে, কোলাপসিবল গেটের সামনে অজয়দা, জয়ন্তদা; মিস মামেন নির্দেশ দিচ্ছেন মালীকে, বাগান ভরে সুবৃহত্ ডালিয়া, গোলাপ।
একটু সকাল সকাল পৌঁছলে দেখা যাবেই ভেজা চুল ছড়ানো সুলেখাদি, মাণিক্যদি, ঊষাদি, বীথিকাদি, পূরবীদি,হস্টেলের খাওয়ার ঘর থেকে ভেসে আসবে আলুসেদ্ধর ঘ্রাণ,'ফার্স্ট ট্রিপের' মেয়েরা এক্কা দোক্কা খেলবে অথবা বুড়ী বাসন্তী। কি এক অদ্ভূত তীক্ষ্ণ কন্ঠে তারা চেঁচায়-'রে ডি লো'। ফার্স্ট বেল পড়লেই সাদা জামা লাল স্কার্টরা সারিবদ্ধ, ডায়াসে মিস মামেন আর সব দিদিরা।
অর্থ না বুঝে আমরা গাইছি 'শুভ কর্মপথে ধরো নির্ভয়গান' অথবা 'প্রতিদিন তব গাথা'-'চলো চলো যাত্রী, চলো দিনরাত্রি' লাইনটা অদ্ভূত ভালো লেগে যাচ্ছে; কখনও সারাদিন গুনগুন করছি, 'তুমি যদি থাকো মনে বিকচকমলাসনে'-নিষিদ্ধশব্দরাজিরা এই নতুন শব্দসমূহের কাছে ক্রমশ: হার মানছে, পিছু হটে যাচ্ছে।
প্রেয়ার হল, প্রাইমারি সেকশন, ছোটো খেলার মাঠ, নমিতাদির ক্লাসের ভেতর দিয়ে অথবা বোর্ডিংএর মেয়েদের লকাররুম দিয়ে পৌঁছে যাওয়া সেকেন্ডারি সেকশন,বড় মাঠ, সাত কল, অন্যদিকে অডিটোরিয়াম, মজা পুকুর, চ্যাপেল আর নিষ্পত্র আমড়া গাছটি-এগারো বছরের জন্য আমাদের পৃথিবী।
বাইরের দুনিয়ার প্রবেশ নিষেধ সেথায়।
জরুরী অবস্থা জারী হচ্ছে, দেশ পত্রিকার কার্টুন পাতাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বিক্রির ঠিক আগে, আমরা মগ্ন কিশলয়ে;উল্টোডাঙ্গার ভয়াবহ রেলদুর্ঘটনার যাবতীয় আতঙ্ক থেকে সযত্নে আমাদের আগলে রাখছেন থী বি-তে অমিতাদি, পড়িয়ে চলেছেন 'ইতি তোমার হাত পা বাঁধা বাবা'; ভারতীয় রাজনীতিতে ওলোটপালোট ঘটে যাচ্ছে আর আমরা সমস্বরে বলে চলেছি 'আমি পর্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব, কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে?'অসীম বিশ্বাসে সুর টেনে টেনে উচ্চারণ করছি,'সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাণকর্তা।'
প্রেয়ার হলের দেয়ালে খ্রীষ্টের মাথায় কাঁটার মুকুট, তীব্র আর্তি আর বিষাদে আচ্ছন্ন মহামানবের মুখ, দিদার ক্যালেন্ডারের নিমাই-এর সঙ্গে এক হয়ে যায় ক্রমশ:। গাজা স্ট্রীপ আমাদের সুদূরতম কল্পনাতেও নেই। আমাদের দুনিয়া বলতে ক্রাইস্ট চার্চ শুধুই ক্রাইস্ট চার্চ।
ঠিক একই ভাবে 'বিপিনবাবুর কারণ সুধা'র মতো হিট গান ক্রাইস্ট চার্চের পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায়, 'আশা ছিল, ভালোবাসা ছিল' নিয়ে অনায়াস তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে পারি। সেই সময়, আমাদের ঘিরে থাকছেন হার্মোনিয়াম নিয়ে গানের দিদি যাঁকে আমরা ডাকতাম গার্গীদি-মৈত্রেয়ীদির মা। শতরঞ্চিতে বসে অবাক বিস্ময়ে শুনছি সহপাঠী সোহিনী পাল চৌধুরীকে-বাঁশির মতো অপার্থিব গলায় সে গাইছে 'তুমি গাও, তুমি গাও গো'।
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী গাইছে 'দীপ নিবে গেছে মম'-যে মুহূর্তে ও গাইছে 'রজনীগন্ধার গন্ধ ভরেছে মন্দিরে', বয়:সন্ধির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
কোথায় বিড্ডু? কোথায় নাজিয়া হাসান? তিরিশ নম্বর যশোর রোডে তাদের প্রবেশ নিষেধ।
কলকাতা কাঁপিয়ে যাচ্ছে গালিলিয়ের জীবন, ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের কখনও 'শাহ-জাহান'-এ, কখনও 'তপতী'তে বিচরণ'। শিশির ভাদুড়ীর উচ্চারণভঙ্গিমায় হারিয়ে যাচ্ছেন শম্ভু মিত্র।
সতীনাথ ভাদুড়ি আসবেন মাধ্যমিকের পরে, ক্রাইস্ট চার্চ ছেড়ে আসার পরবর্তী সময়ে; আমরা ডুবে আছি বিভূতিভূষণে-কুমকুমদি পাঠ্যসূচীর বাইরে বলছেন পুইঁমাচা থেকে-'দিদি বড়ো ভালবাসতো' ... আমাদের চোখে জল আসছে; নিভাদি জিগ্যেস করছেন, 'রাজা পড়েছ?'
আমরা মুখস্ত বলে যেতে পারি শেষের কবিতা; সুমনা , মুনমুন , মনীষা ব্যানার্জীর সঙ্গে নিয়মিত রবীন্দ্র কোটেশনের খেলা।মধ্যরাতে ফুটপাথ বদলে গেছে-খবর রাখি নি।
পেলে এসেছেন কসমসের হয়ে; ইডেনে নতজানু টোনি গ্রেগ; আমরা আছি এক্কা দোক্কা, কবাডি আর ব্রতচারীতে, ক্বচিত্ টিফিনবেলায় দলবল জুটিয়ে সামান্য ফুটবল আর ক্রিকেট; বিয়র্ন বর্গ দুনিয়া কাঁপাচ্ছেন, মেয়েরা ফিসফিস করছি বাংলা কাগজে প্রকাশিত মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।
পরিত্যক্ত বাস্কেটবল কোর্ট, জালহীন গোল আংটা , মরচে ধরা।
ক্লাইভ হাউস,যশোর রোড ফেলে রেখে এসেছি আজ অনেকবছর।
ল্যান্ড মাইন,, বেসলান, মণিপুর, কৃষ্ঞতেলে ভাসমান সাগরপাখী।
জেনেছি, সাদা কালোর মাঝে ধূসর কিছুর অবস্থান।
তবু কেন সন্তানকে শেখাতে চাই 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ'-নিভাদি যা মন্ত্রের মতো আউড়ে গেছেন আমাদের কাছে?
কেনই বা মনে পড়ে সেই সোনালী চুলের তরুণ মহামানব? 'এলি এলি লামা শবক্তানি'-হে ঈশ্বর, এরা জানে না কি অপরাধ করেছে, তুমি এদের ক্ষমা করো।
যতদূরেই যাই, এ হদৃয় বহন করে চলে ৩০ যশোর রোডের অলৌকিক এগারোটি বছর, স্কুলের লম্বা ছুটি শুরুর সকাল- প্রেয়ার হলে দিদিদের মঙ্গলস্তোত্রের অমোঘ পংক্তি -'যাবত্ সাক্ষাত্ না হয় পুনরায়, ঈশ্বর রক্ষা করুন তোমায়, তৃপ্ত রাখুন দৈনিক মান্নায়, ঈশ্বর থাকুন তোমারই সহায়'।
অবিশ্বাসী হেঁটে চলে।
অনি:শেষ পথ।
"যাবত্ সাক্ষাত্ না হয় পুনরায় ... '
বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ প্রস্তর-মস্তক হারাচ্ছেন ক্ষণে ক্ষণে, নতুন করে পাওয়ার জন্য নয়।
আমাদের উত্তর শহরতলীতে শিশুরাও পরিচিত বোমা, পাইপগানের গঠনে; নিষিদ্ধ শব্দরাজিতে যুক্ত হচ্ছে লাশ,পার্টি, নকশাল এবং চারুবাবু।
এমত সময়ে, লাল স্কার্ট, সাদা জামা, লাল রিবনে ভগ্নীদ্বয় শুরু করেছি স্কুলে যাওয়া। রিকশপথ জুড়ে দেখতে থাকি রেললাইনের পাশের বস্তি, বাংলাদেশী উদ্বাস্তু ভিখারিনী, যশোর রোডে বাসে থ্যাঁতলানো কুকুর,অজস্র দেওয়াল লিখন যা নিষিদ্ধধ্বনিমাধুর্যে আমাদের মুখস্ত; কুমোরপাড়ার খড়ের কাঠামো দেবদেবীদের অলৌকিকত্ব সম্বন্ধে আমাদের মোহমুক্ত করে।
পাড়া ও পথের যাবতীয় কুশ্রীতা, যতেক অনলৌকিকত্ব আমাদের স্কুলের দেওয়ালে ধাক্কা খায়, প্রবেশের পথ পায় না। প্রাচীন স্কুলবাড়ী, সবুজ লোহার গেট, জামরুল গাছের তলায় ফোল্ডিং চেয়ারে সস্ত্রীক বাহাদুর দ্বাররক্ষী, প্রশস্ত পথে সবুজ স্কুল বাস দাঁড়িয়ে, কোলাপসিবল গেটের সামনে অজয়দা, জয়ন্তদা; মিস মামেন নির্দেশ দিচ্ছেন মালীকে, বাগান ভরে সুবৃহত্ ডালিয়া, গোলাপ।
একটু সকাল সকাল পৌঁছলে দেখা যাবেই ভেজা চুল ছড়ানো সুলেখাদি, মাণিক্যদি, ঊষাদি, বীথিকাদি, পূরবীদি,হস্টেলের খাওয়ার ঘর থেকে ভেসে আসবে আলুসেদ্ধর ঘ্রাণ,'ফার্স্ট ট্রিপের' মেয়েরা এক্কা দোক্কা খেলবে অথবা বুড়ী বাসন্তী। কি এক অদ্ভূত তীক্ষ্ণ কন্ঠে তারা চেঁচায়-'রে ডি লো'। ফার্স্ট বেল পড়লেই সাদা জামা লাল স্কার্টরা সারিবদ্ধ, ডায়াসে মিস মামেন আর সব দিদিরা।
অর্থ না বুঝে আমরা গাইছি 'শুভ কর্মপথে ধরো নির্ভয়গান' অথবা 'প্রতিদিন তব গাথা'-'চলো চলো যাত্রী, চলো দিনরাত্রি' লাইনটা অদ্ভূত ভালো লেগে যাচ্ছে; কখনও সারাদিন গুনগুন করছি, 'তুমি যদি থাকো মনে বিকচকমলাসনে'-নিষিদ্ধশব্দরাজিরা এই নতুন শব্দসমূহের কাছে ক্রমশ: হার মানছে, পিছু হটে যাচ্ছে।
প্রেয়ার হল, প্রাইমারি সেকশন, ছোটো খেলার মাঠ, নমিতাদির ক্লাসের ভেতর দিয়ে অথবা বোর্ডিংএর মেয়েদের লকাররুম দিয়ে পৌঁছে যাওয়া সেকেন্ডারি সেকশন,বড় মাঠ, সাত কল, অন্যদিকে অডিটোরিয়াম, মজা পুকুর, চ্যাপেল আর নিষ্পত্র আমড়া গাছটি-এগারো বছরের জন্য আমাদের পৃথিবী।
বাইরের দুনিয়ার প্রবেশ নিষেধ সেথায়।
জরুরী অবস্থা জারী হচ্ছে, দেশ পত্রিকার কার্টুন পাতাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বিক্রির ঠিক আগে, আমরা মগ্ন কিশলয়ে;উল্টোডাঙ্গার ভয়াবহ রেলদুর্ঘটনার যাবতীয় আতঙ্ক থেকে সযত্নে আমাদের আগলে রাখছেন থী বি-তে অমিতাদি, পড়িয়ে চলেছেন 'ইতি তোমার হাত পা বাঁধা বাবা'; ভারতীয় রাজনীতিতে ওলোটপালোট ঘটে যাচ্ছে আর আমরা সমস্বরে বলে চলেছি 'আমি পর্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব, কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে?'অসীম বিশ্বাসে সুর টেনে টেনে উচ্চারণ করছি,'সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাণকর্তা।'
প্রেয়ার হলের দেয়ালে খ্রীষ্টের মাথায় কাঁটার মুকুট, তীব্র আর্তি আর বিষাদে আচ্ছন্ন মহামানবের মুখ, দিদার ক্যালেন্ডারের নিমাই-এর সঙ্গে এক হয়ে যায় ক্রমশ:। গাজা স্ট্রীপ আমাদের সুদূরতম কল্পনাতেও নেই। আমাদের দুনিয়া বলতে ক্রাইস্ট চার্চ শুধুই ক্রাইস্ট চার্চ।
ঠিক একই ভাবে 'বিপিনবাবুর কারণ সুধা'র মতো হিট গান ক্রাইস্ট চার্চের পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায়, 'আশা ছিল, ভালোবাসা ছিল' নিয়ে অনায়াস তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে পারি। সেই সময়, আমাদের ঘিরে থাকছেন হার্মোনিয়াম নিয়ে গানের দিদি যাঁকে আমরা ডাকতাম গার্গীদি-মৈত্রেয়ীদির মা। শতরঞ্চিতে বসে অবাক বিস্ময়ে শুনছি সহপাঠী সোহিনী পাল চৌধুরীকে-বাঁশির মতো অপার্থিব গলায় সে গাইছে 'তুমি গাও, তুমি গাও গো'।
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী গাইছে 'দীপ নিবে গেছে মম'-যে মুহূর্তে ও গাইছে 'রজনীগন্ধার গন্ধ ভরেছে মন্দিরে', বয়:সন্ধির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
কোথায় বিড্ডু? কোথায় নাজিয়া হাসান? তিরিশ নম্বর যশোর রোডে তাদের প্রবেশ নিষেধ।
কলকাতা কাঁপিয়ে যাচ্ছে গালিলিয়ের জীবন, ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের কখনও 'শাহ-জাহান'-এ, কখনও 'তপতী'তে বিচরণ'। শিশির ভাদুড়ীর উচ্চারণভঙ্গিমায় হারিয়ে যাচ্ছেন শম্ভু মিত্র।
সতীনাথ ভাদুড়ি আসবেন মাধ্যমিকের পরে, ক্রাইস্ট চার্চ ছেড়ে আসার পরবর্তী সময়ে; আমরা ডুবে আছি বিভূতিভূষণে-কুমকুমদি পাঠ্যসূচীর বাইরে বলছেন পুইঁমাচা থেকে-'দিদি বড়ো ভালবাসতো' ... আমাদের চোখে জল আসছে; নিভাদি জিগ্যেস করছেন, 'রাজা পড়েছ?'
আমরা মুখস্ত বলে যেতে পারি শেষের কবিতা; সুমনা , মুনমুন , মনীষা ব্যানার্জীর সঙ্গে নিয়মিত রবীন্দ্র কোটেশনের খেলা।মধ্যরাতে ফুটপাথ বদলে গেছে-খবর রাখি নি।
পেলে এসেছেন কসমসের হয়ে; ইডেনে নতজানু টোনি গ্রেগ; আমরা আছি এক্কা দোক্কা, কবাডি আর ব্রতচারীতে, ক্বচিত্ টিফিনবেলায় দলবল জুটিয়ে সামান্য ফুটবল আর ক্রিকেট; বিয়র্ন বর্গ দুনিয়া কাঁপাচ্ছেন, মেয়েরা ফিসফিস করছি বাংলা কাগজে প্রকাশিত মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।
পরিত্যক্ত বাস্কেটবল কোর্ট, জালহীন গোল আংটা , মরচে ধরা।
ক্লাইভ হাউস,যশোর রোড ফেলে রেখে এসেছি আজ অনেকবছর।
ল্যান্ড মাইন,, বেসলান, মণিপুর, কৃষ্ঞতেলে ভাসমান সাগরপাখী।
জেনেছি, সাদা কালোর মাঝে ধূসর কিছুর অবস্থান।
তবু কেন সন্তানকে শেখাতে চাই 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ'-নিভাদি যা মন্ত্রের মতো আউড়ে গেছেন আমাদের কাছে?
কেনই বা মনে পড়ে সেই সোনালী চুলের তরুণ মহামানব? 'এলি এলি লামা শবক্তানি'-হে ঈশ্বর, এরা জানে না কি অপরাধ করেছে, তুমি এদের ক্ষমা করো।
যতদূরেই যাই, এ হদৃয় বহন করে চলে ৩০ যশোর রোডের অলৌকিক এগারোটি বছর, স্কুলের লম্বা ছুটি শুরুর সকাল- প্রেয়ার হলে দিদিদের মঙ্গলস্তোত্রের অমোঘ পংক্তি -'যাবত্ সাক্ষাত্ না হয় পুনরায়, ঈশ্বর রক্ষা করুন তোমায়, তৃপ্ত রাখুন দৈনিক মান্নায়, ঈশ্বর থাকুন তোমারই সহায়'।
অবিশ্বাসী হেঁটে চলে।
অনি:শেষ পথ।
"যাবত্ সাক্ষাত্ না হয় পুনরায় ... '
Khub bhalo lekha
ReplyDelete