Posts

এলিজি

প্রকাণ্ড হাঁসের পিঠে উড়ে বেড়াচ্ছি; পায়ের তলায় ময়দার দলার মতো মেঘ, তারও নিচে চৌকোনা জমি - সবুজ, হলুদ, বাদামী, লালচে রঙের খোপ পাশাপাশি; যেন বুড়ো আংলার মলাট আচমকা থ্রি ডি হয়ে গিয়ে আমাকে টেনে নিয়েছে তার ভিতরে। সামান্য মাথা ঘুরছিল তারপর হঠাৎ খুব শীত করে উঠল - মনে হল ঠাণ্ডা জলে পড়ে গিয়েছি। ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি , গায়ের ওপর থেকে কখন যেন লেপ সরে গিয়েছে, মুখের ওপর মশারি ঈষৎ ঝুঁকে - ঘোলাটে অন্ধকার আর ন্যাপথালিনের গন্ধে সমস্ত ঘর থম মারা। লেপের তলায় শীত করছিল। পুরোনো স্যাঁতানো লেপ। তবে ওয়াড় খড়খড়ে নতুন। আমি আসব বলে মীরাদি সদ্যই কিনে এনেছে হয়তো। শোয়ার সময় খেয়াল করেছিলাম,  বালিশের ঢাকনা , বিছানার চাদর সব নতুন;  বালিশের ওপর ছোটো তোয়ালেতে দামের স্টিকার আটকে রয়েছে। মীরাদি বিসলেরির বোতল খাটের পাশে রেখে দিয়ে বলেছিল, " একটা লেপে হবে তোমার? পায়ের কাছে কম্বল রাখব? শীত করলে টেনে নিও।" " তেমন ঠাণ্ডা নয় তো"- পায়ের কাছে আবার একটা কম্বলের উপস্থিতি অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল। রাতে সত্যি তেমন শীতও করে নি । অথচ এখন করছে। লেপটা মাথা অবধি টেনে স্বপ্নের কথা ভাবছিলাম; লেপের খোলে প্রাচীন শিমূল তুলোরা সব ড্যালা ...

অ্যানাগ্রাম

 - তোরা কি শেষ অবধি যাবি? - মানে শ্মশানে যাবো কি না বলছিস? "শেষ অবধি মানে তো তাই, না?"- সাইড মিরর দেখে নিয়ে একবার ঘাড় ঘোরালো অশোক, তারপর আবার সামনে। নীরবতার স্ট্রেচ তৈরি হল একটা; সুপ্রিয়া বাইরের কুয়াশায় তাকিয়ে রইল, পিছনের সীটে পৃথ্বীশ আর আমি পরস্পরকে একবার দেখে নিলাম যেন গো গো গো গো স্ট্যাচু খেলার ডাক দিয়েছে কেউ, আর আমরা সে খেলায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য পারস্পরিক অনুমোদন চাইছি যা অনাবশ্যক অথচ অবশ্যম্ভাবী। সুপ্রিয়ার দিকে তাকিয়ে নিয়ে অশোকই কথা বলে উঠল আবার - "স্নেহর ওখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারব না বুঝলি? আসলে, সুপ্রিয়ার পিসির বাৎসরিক আজ - বেহালায় যেতে হবে। তোরা তবে ফিরবি কী ভাবে? শ্মশানে যাস যদি. উবার নিবি?" "ভাবি নি কিছু, ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে.. মানে স্নেহময়ের লোকবল কেমন সেটা বুঝে…" - পৃথ্বীশ জানলার কাচ নামাল সামান্য। একটা শ্বাস ফেলল আওয়াজ করে। গুমোট কাটানোর জন্য ঐ শ্বাসটুকু লুফে নিয়েই তাতে কথা জুড়ে দিলাম আমি- " ট্রেনে ফিরে আসব, স্নেহদের বাড়ির কাছেই স্টেশন। মনে নেই?"  শেষ দুটি শব্দ ভর করে পুরোনো কথাদের আসা উচিত;  অথচ অশোক বর্তমানেই - "কা...

বিরাশি ডিগ্রি পূর্ব

জীবনের সর্বাপেক্ষা ভীতির স্থল , বেদনার কারণ সম্ভবত এই যে ,  সময়কে একটি মুহূর্তে স্থির রাখা কিম্বা ইচ্ছেমতো আগুপিছু করা যায় না। আবার সব থেকে ভরসার জায়গাও এইখানেই। সময়ের সামনে আমরা সবাই সমান। অথবা কানেক্টেড। আজ এই মুহূর্তে আমি যেখানে   যেতে চাইছি , লীলা হয়তো অন্য কোনো সময়ে পৌঁছোনোর কথা ভাবছে , আবার তিন্নি , বিল্টুদের চয়েস একেবারেই আলাদা হবে , হওয়াই উচিত।   সময়কে থামিয়ে দেওয়ার , এগোনো পিছোনোর ক্ষমতা যদি আমাদের হাতে থাকতো , তাহলে , এই যে হাসপাতালের বারান্দা , টবের গাছ , আলো ছায়া , এই সব সারিবদ্ধ কেদারায় রোগীদের আত্মীয়স্বজন , ডাক্তারবাবু , নার্সদিদি , পিজিটিরা ,  যেভাবে এক ছাদের নিচে রয়েছি , হয়তো তা ঘটতই না , যে যার মতো সময় বেছে নিয়ে , সেখানেই থেকে যেতাম আমরা। গোটা পৃথিবী যেন এক হাইপারল্যাপ্স ভিডিও হয়ে যেত তখন। মাথা টলটল করে উঠল আমার।   এত আপেক্ষিকতার চিন্তা এই মুহূর্তে হ্যান্ডল করতে পারছিলাম না , যদিও সময় এগিয়ে দেওয়ার একটা খেলা খেলতে চাইছিলাম। একা একাই। ...