অরুন্ধতীর দশটি গল্প

 চাঁপাফুলের গন্ধে

এস এস অরুন্ধতী
গুরুচন্ডা৯ প্রকাশনা
দামঃ ১৫০ টাকা

নিতান্ত শৈশবে মা বাবার সঙ্গে একটি বাড়িতে গিয়েছিলাম- মা র কোনো বন্ধুর পৈতৃক বাড়ি সম্ভবত। বড় বাড়ি, উঠোন, প্রশস্ত ঘরগুলিতে আরো কয়েকটি শিশুর সঙ্গে আমিও লুকোচুরি খেলছিলাম, খাটের তলায় লুকোতে গিয়ে মাথায় গুঁতো লাগছিল, প্রাচীন পালঙ্কের মশারি টাঙানোর একটি দন্ড বারে বারে হেলে পড়ছিল সেহেতু- এই সব মনে আছে। খেলা শেষে চেয়ারে বসে লুচি খেতে খেতে দেওয়ালের ছবি গুলি দেখছিলাম- একটি বড় বাঁধানো ফোটোগ্রাফে দম্পতির কোলে দুটি একইরকম দেখতে শিশু-টিপ পরা, চোখে কাজল- বারে বারে ছবির দিকে চোখ যাচ্ছিল- দুটি শিশুরই চোখ ছিল বন্ধ- রোদ বা ক্যামেরার ফ্ল্যাশে চোখ কুঁচকে বন্ধ নয়-  শান্ত, নিরুত্তাপ বন্ধ চোখ- যেন এই পৃথিবীতে তাদের কিছু দেখবার নেই।
বহুবছর পরে সে ছবির প্রসঙ্গে উঠেছিল- জেনেছিলাম-  দুই মৃত শিশুর শেষ ফোটোগ্রাফ সেটি। বেদনা, বিষাদ ছাপিয়ে সেদিন আমার মনে অভিঘাতের যে দিকটি চিরস্থায়ী হয়েছিল- তা ভয়ংকর বিস্ময়- জীবনের তথা মানবমনের বিচিত্র রহস্যাবৃত অঞ্চলের আভাস আমাকে বিহ্বল করেছিল।

'চাঁপাফুলের গন্ধে' র প্রথম পাঠে সেইসব কথা মনে হল। 

অরুন্ধতীর গল্প এই সাইটেই পড়েছি। পাঠক সমাদৃত সমস্ত গল্প। ভূমিকাতে শ্রীমতী প্রতিভা সরকারও পরম যত্নে গল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।  এর পরে পাঠপ্রতিক্রিয়ায় নতুন করে কিছু বলার থাকে না।

যা বলার তা হল গল্পের একটি সামগ্রিক প্যাটার্ন- চেন রিয়াকশন বা ডমিনো এফেক্টে যা পাঠককে আবিষ্কার করায় জীবনের রহস্যময় আনাচকানাচ। 
প্রায় প্রতিটি গল্পেরই শুরু নিরীহ ভঙ্গিতে - হয়তো বৃষ্টির দৃশ্য-একটি বৌ বৃষ্টি দেখছে, বা কোলকুঁজো বৃদ্ধ জানলার ধুলো ঝাড়ছেন, একটি মেয়ে ফুলের টব সরাচ্ছে...  যেন ক্যামেরা পিছন থেকে একটি অবয়বকে ধরছে- হয়তো বা সিলুয়েট, হয়তো লং শট- গল্প চলতে থাকে- চরিত্রটি ধীরে মুখ ফেরায় পাঠকের দিকে তারপর ক্লোজ আপে তার মনের রহস্যময় খানা খন্দ, জমে থাকা জল, রক্ত, অন্তর্ঘাতের আভাস।
অথচ এ সবই বেঁচে থাকার গল্প। 
দেওয়ালের ঝুলে থাকা  প্রাচীন ছবিতে চুল আঁচড়ে পাটভাঙা পোশাকে মৃত শিশুকোলে দম্পতির ফোটোগ্রাফ- ফ্রেমে আটকানো - তারই সামনে রৌদ্রবহুল ঘরদোর, রবিবারের সকাল, শিশুদের খেলাধুলো, রান্নাঘর থেকে আসা ফোড়নের বাস- জীবনের অপ্রতিরোধ্য টান।

Comments

Popular posts from this blog

চরাচরের পাখিরা

কোলক্লিফ, ২০২৩

সলস্টিস