Posts

Showing posts from 2023

কুয়াশাদিনের ভালো মন্দ

  আজকের সন্ধ্যেটা আগাগোড়া অন্যরকম- বিকেলের পরে এত কুয়াশা কখনও দেখি নি, সূর্য ডুবতেই পাহাড়ের দিক থেকে কুয়াশা নেমেছে হাতীর পালের মতো,  তারপর এই রাস্তাঘাট, দোকান বাজার ঘরদোর ছেয়ে ফেলেছে। বাড়ি থেকে বেরোলেই  ঘন কুয়াশা জড়িয়ে যাচ্ছিল শরীরে, গুটিপোকার মত মানুষজন ঘোলাটে পথঘাটে হাঁটছিল, কথা বলছিল ঈষৎ জোরে যেন এই বিকেলে কথাদের হারিয়ে যাওয়ার প্রভূত  সম্ভাবনা। জোলো বাতাসে কুয়াশার ঘেরাটোপকে আমার বাপের বাড়ির মশারির মতো লাগছিল, এই পথঘাট ফলত স্বপ্নের এবং অবাস্তব - মানুষজন যেন জোব্বা পরা মরুবাসী অথবা মেরুপ্রদেশের; কুয়াশার সর ক্রমশ এমন ঘন আর রহস্যময় হয়ে উঠছিল যে চেনা পাড়াকে অজানা দ্বীপ বোধ হচ্ছিল - কুয়াশা  ফুঁড়ে  যে কোনো মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রকাণ্ড কাছিম অথবা ক্ষুদে  পেঙ্গুইনের দল, অ্যালবাট্রসের পাখার ঝাপট লাগতে পারে গায়ে।   সুজান আর বিলের বাড়ির অভ্যন্তর পর্দাটানা- কুয়াশার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না  তবে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বোঝা যাচ্ছিল - গোটা হলঘর, ল্যান্ডিং এ যত কাচের তলে - জানালার , দরজার অথবা শোকেসের পাল্লার উপরিভাগে জলকণা জমছিল । আমার চোখের সামনে...

ট্রফি

  Tame birds sing of freedom, wild birds fly....   হাওয়াবিহীন দিনগুলিতে আকাশকে চুপসানো বেলুনের খণ্ড মনে হয় - ফ্রেমে  আটকানো; যেদিন বাতাস ওঠে,  নীল বেলুনের টুকরো ঢাউস শামিয়ানা হয়ে উড়তে থাকে,  মেঘ আর ডানারা মোটিফ তৈরি করে -  সাদা কালো লাল নীল মেঘ ছেনে  ছোটো ডিঙি,  বড় বড় পালতোলা  নৌকো, বিশাল সব দুর্গ,  হাতি, উট  আর বুড়ো মানুষ। তার ওপর ঘুড়িরা লাট খায়, জেট চলে যাওয়ার ঘন সাদা লাইন ফিকে হতে হতেই একগুঁয়ে উড়োজাহাজরা উড়ে যায় আচমকা। পাখিরা চক্কর কাটে আর চক্কর কাটে,  শেপ ফর্ম করে - ভি, ওয়াই, এম, এ, ডব্লিউ; কখনও তারা  মানুষের কাছাকাছি নেমে আসে এমন,  যেন ডানার কথা ভুলেই গিয়েছে। ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে  আকাশ দেখি- ডান হাত মাথার নিচে, বাঁ হাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে, কাঁধের খুব কাছেই চেটো- তাতে তিনটে আঙুল। যেন ডানা। আমি হৃদয়রাম, পঁয়ত্রিশ বছরের এক্ট্রোড্যাকটাইলি পেশেন্ট। উড়তে পারি না অথচ  বাঁ কাঁধে কারো হাত ঠেকলে খাঁচায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পাই। আসলে এ'সবই ডানার গল্প।     ১ - ভাবো কোনান ডয়েলের সঙ্গে এই রকম ভ...

পদ্মসম্ভব

  বহুদিন পর আমাদের ঘরদোরে   আজ পাহাড়ের গন্ধ। এক চিলতে বারান্দায় আবার একটা পুরোনো ব্যাকপ্যাক, ছেড়ে রাখা ভারি জুতোয় নুনের সাদা সাদা ছোপ   - রোদ এসে পড়েছে তাতে। বারান্দার দিক থেকে পাহাড়ের গন্ধ উড়ে আসছিল, আর এই খাট বিছানা, সোফা, টিভি, ডাইনিং টেবল,   চেয়ারের আগাপাশতলা ছেয়ে ফেলছিল - আকাশে জমে ওঠা মেঘের মতো, যেন এখনই বৃষ্টি নামবে।   আমি কোনোদিন পাহাড়ে যাই নি। বীথিকাও নয়। একটা পিকচার পোস্টকার্ডে পাহাড়ের রঙীন   ছবি দেখেছিলাম প্রথম - বাচ্চুদার ভ্যারাইটি স্টোরে। দোকানে ফিল্মস্টারদের ছবি ঝুলত - গাঢ় নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে মিঠুন, অমিতাভ, বিনোদ খান্না, জীনত, হেমামালিনী , রেখা- সাদা বর্ডার দেওয়া, পোস্টকার্ড সাইজ -স্ট্যান্ডার্ড।   ওখানেই একদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছিলাম- ঝাপসা একটা প্রিন্ট- ঋষি আর ডিম্পলের মাঝখানে ঝুলছিল। শ্রীদেবীর ছবির সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা ফ্রী দিয়েছিল বাচ্চুদা- " পাঁচবছর ধরে পড়ে থেকে   রঙ উঠে গেছে, কে   কিনবে ঐ ছবি? " সে সময় স্কুলের  ছুটি হলেই মামাবাড়ি- বহরমপুরে।  বার দুই দীঘা গিয়েছিলাম, পুরীতেও। ক্লাস নাইনের পুজোর ছুটিতে দার্জিলিং যাওয়ার ক...