অমৃত্যুর গল্প
যে সুচিত্রা সেন কিডন্যাপ হয়েছিলেন
কুলদা রায়গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন
দাম ১২০ টাকা
ইদানিং বই নিয়ে হয়তো একটু বেশিই লিখছি। অন্তর্মুখী স্বভাব এবং আরো নানাবিধ হিজিবিজি কারণে অনেকদিন বই নিয়ে সেভাবে লিখি নি। একই সঙ্গে, গত কয়েক বছর ব্যক্তিগতভাবে নিজের লেখা, 'লেখক' পরিচিতি নিয়ে অযাচিত সম্মান, প্রশংসা যেমন পেয়েছি, তেমনি বেদনা, কখনও অপমানও। এসবই খুব স্বাভাবিক। একজন স্বল্পপঠিত- র প্রাপ্যই হয়তো । এভাবেই ব্যালান্স বজায় থাকে। মাটির ওপর ভেসে বেড়াতে পারি না, পাতাল প্রবেশও ঘটে না।
অতীতে কিছু লেখার সমালোচনা বা কাটা ছেঁড়া করে লিখতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে 'লেখক' আমির ছায়া পড়ে- এইটা হলে ভালো হত, তীক্ষ্ণ হত এইসব ভেবেছি, লিখেওছি। অনেকেই পছন্দ করেন নি। পরে আমারও খারাপ লেগেছে। সে চেষ্টা আর করি না। আসলে,লেখা ভালো কী মন্দ সে বিচার তো আপেক্ষিক। লেখা কালোত্তীর্ণ হবে কী হবে না সে বিচারও করেন স্বয়ং মহাকাল। আপাতত, একান্ত কিছু বেদনাবোধ থেকেই খেরোর খাতায় কয়েকটি বইয়ের নাম টুকে রাখা, পাঠককে জানিয়ে রাখা লেখকের নাম ,যাঁদের লেখা আমার বিচারে অন্যরকম, উল্লেখযোগ্য, অথচ স্বল্পপঠিত।
কুলদা রায়কে সেই বিচারে স্বল্পপঠিত বলা চলে না। খুব অল্প সময়ে কুলদা অনন্য একটি স্থান করে নিয়েছেন আজকের বাংলা লেখাজোকায়। কুলদাবাবুর লেখার মূল সুরটি এই বইতে, গল্প শুরুর আগেই উৎকীর্ণ- "The struggle of man against power is the struggle of memory against forgetting"- মিলান কুন্দেরার The book of laughter and forgetting থেকে একটি উদ্ধৃতি। কুলদাবাবুর লেখা নিয়ে এই সব কথা ফিরে ফিরে এসেছে লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে, কুলদাবাবুর লেখা বিষয়ক প্রবন্ধে। খেরোর খাতার আজকের এন্ট্রিতে সে সবের পুনরাবৃত্তি অবান্তর। তদুপরি, ইতিহাস, স্মৃতি-বিস্মৃতি, গণস্মৃতি এবং সর্বোপরি প্রাচীন ইতিহাসের ভারি, স্থবির প্রেক্ষাপটের সামনে একক প্রস্ফুটিত জীবন আর বর্তমানের ক্রমাগত প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার সামনে আমাদের তুচ্ছ, গতানুগতিক জীবনের বৈপরীত্য খেরোর খাতায় আঁটে না।
আমার আজকের আঁকিবুকি তবে কেন?
গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনের এই সংকলনটির কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা লিখে রাখা দরকার মনে হল।
বস্তুত, খেরোর খাতার একটি এন্ট্রিতে রমাপদ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করেছিলাম ছোটো গল্প আর উপন্যাসের ভিন্ন ভাব, ভিন্ন আঙ্গিক প্রসঙ্গে। এটি একটি দৃষ্টিকোণ মাত্র- এই সব নয়। কুলদাবাবুর বহু লেখাই একই সঙ্গে উপন্যাস ও ছোটোগল্পের ভাব বহন করেছে। গল্পের চরিত্রগুলির বহুস্তরীয় উদ্বর্তন, গল্পের কেন্দ্রে বা পরিধিতে থাকা বিবিধ জনশ্রুতি, মিথ এবং লেখায় কথকতার আঙ্গিক যেভাবে কুলদাবাবুর লেখায় এসেছে, তাকে "ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখকথা- নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি; তারি দু'চারিটি অশ্রুজল"- এর সংজ্ঞায় আঁটানো যায় না। অধিক পরিসর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
গুরুচণ্ডা৯র এই সংকলনে গল্পের চয়ন, ক্রম ও আয়তন কুলদাবাবুর লেখাকে পাঠকের কাছে তার সমস্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৌঁছে যাওয়ার পরিসর দিয়েছে।
কুলদাবাবু বলেন- একটি গল্পে গল্পই থাকে-জীবনের গল্প, মৃত্যুর গল্প, অমৃত্যুর গল্প। এই অমৃত্যু থাকে বলেই মানুষ গল্পটি নিজের করে নেয়। ভুলতে পারে না।
আলোচিত সংকলন জুড়ে অমৃত্যুকেই প্রত্যক্ষ করেছি। আশা রাখি, পাঠকও করবেন।
Comments
Post a Comment