অবসাদের গল্প

 আটটি অবসাদের গল্প।

গৌতম চক্রবর্তী
কেতাব e
দামঃ ২০০ টাকা

শ্রী স্বপন পাণ্ডা ভূমিকায় যথার্থই লেখেন, "স্মৃতি চেতনা ও কল্পনার জগতের আলোছায়ায় তাঁর অতি নগণ্য ধুসর চরিত্ররা নড়াচড়া করে।"
 
এই বইখানির প্রচ্ছদ, নাম, আটটি গল্পের শিরোনাম স্পষ্টই চেতাবনী দেয় যে পাঠক সম্ভবত এক অন্ধকার পুরীতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যেখানে আলো ঢোকে না, বাতাস খেলে না। বইটি শেষ করে আমারও মনে হল এতক্ষণ অন্ধকার জগতে ঘুরে বেরিয়েছি - মানুষ যেখানে তার যাবতীয় হতাশা বেদনা অবসাদ বহন করতে করতে ছায়াপিণ্ড - একের থেকে অপরকে আলাদা করা যাচ্ছে না। চরিত্রগুলি কথা বলে কম, যেটুকু কথা তাও অতি মৃদুস্বর, যেন নিজের কথা বলতে তাদের অস্বস্তি - অবসাদগ্রস্ত মানুষজন যেমন; বস্তুত যেন ইন্ফ্রারেড নাইট ভিসন মনোকিউলার চোখে লাগিয়ে চরিত্রদের দেহভঙ্গি থেকে  বুঝে নিতে হয় তাদের, পারস্পরিক সম্পর্কদের, - ঈশারাময়তা এখানে এমনই সূক্ষ্ম। কখনও মনে হয়, গোটা বইটি-ই একটি টানা গল্প যেন - তাতে ভিন্ন পর্ব শুধু - যেন কোনো পর্বের একটি চরিত্র ভিন্ন পর্বে ভিন্ন নাম নিয়েছে - হয়তো "বাবা মেয়ের দিনকালের" এর মেয়েটি বড় হয়ে "অয়ন শর্বরীর কোনো একটা দিন" এর শর্বরী, হয়তো "আবর্ত"র সীমান্ত  "রোহনের যেসব কথা কেউ কেউ জানে" র গ্রে হ্যাট হ্যাকার হয়ে গেছে, অথবা "হলুদ সমুদ্রে" পৌলমীর সঙ্গে সমুদ্রে এসেছে;  বিষাদ ও অবসাদের অনন্ত স্রোতে ভেসে যাওয়া কুটোর আলাদা করে বর্ণনের কী বা প্রয়োজন? 
 
কখনও জীবনানন্দকে মনে পড়ে;  কখনও বিশ্বসাহিত্যের নানা লেখার ছায়াপাত ঘটে। 
লেখকের ভাষা, ডিটেইলিং অনন্য। উদাহরণ দিঃ
"অয়ন শর্বরীর কোনো একটা দিন" থেকে পড়ছিঃ
"পা ফাঁক করে চেয়ারে বসে, মাথা ঝুঁকিয়ে সে মেঝের দিকে তাকায় আর এর দরুণ সে আজ প্রথমবার তাদের দেখতে পায়। একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী মেঝে ও দেয়ালের সংযোগস্থল ধরে তারা তাদের তিন ভাগে বিভক্ত খুদে কালো শরীরগুলোকে ছয় পায়ের ওপর ভর দিয়ে দ্রুত লয়ে মুখে গুঁড়ো খাবার নিয়ে একটা সরলরেখা ধরে এগিয়ে চলেছে। মাথা তুলে সে একবার দেখে নেয়। শর্বরী এখন ক্যালেন্ডারের বুকে আঙুল চেপে দাঁড়িয়ে আছে। নিঃসাড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সে বাঁ পায়ের চটি খোলে। বাঁ হাতের মোটা মোটা আঙুলগুলো চটির শরীরে সন্তর্পণে স্ট্র‌্যাপের তলা দিয়ে সেঁদিয়ে যায়। তারপর উবু হয়ে বসে আঙুলগুলো বেঁকিয়ে চুরিয়ে চপ্পলের চারপশ শক্ত করে ধরে, সে সরলরেখাটার ওপর চটির সামনের ভাগ দিয়ে চাপ দেয়।"
 
ব্যক্তিগতভাবে, এক সাধারণ পাঠক হিসেবে এই নিকষ অন্ধকারে একটি বেদনাহত হৃদয় খুঁজে ফিরেছি - ঘা খাওয়া, রক্ত ঝরছে  অথচ জীবন দবদব করছে সেখানে -  অন্ধকারে যার আলো ছড়ানোর কথা ছিল। 

Comments

Popular posts from this blog

চরাচরের পাখিরা

কোলক্লিফ, ২০২৩

সলস্টিস