স্বপ্নের ডালপালা

 অগাস্ট ছিল ভ্যাকসিনের মাস। তিনজনের ডাবল ডোজ হয়ে গেছে মাসের গোড়ায়। পঞ্চমজন সেকন্ড ডোজের লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে এসেছিল- শেষ সপ্তাহে আবার যাবে । সেই সব কথা হচ্ছিল। ভ্যাকসিনের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথমের মাথা ঘুরেছিল, আর তৃতীয়র সামনে দাঁড়ানো বুড়ো মানুষ সটান পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল- এই সব কথা। তারপর কে কত ভোরে লাইন দিয়েছিল, বাড়ি ফিরে ভাত বসাতে কত দেরি- এই সব গল্প।  কখনও কথার মাঝখানে সামান্য নীরবতা ছিল- যখন মাস্ক নামিয়ে জল খাচ্ছিল কেউ, কখনও আবার কথার পিঠে কথা উঠে গিয়ে খুচরো কথার মণ্ড তৈরি  হয়ে যাচ্ছিল - মাখা ভাতের মত নরম মন্ড যা কিছু পরেই শুকনো হয়ে শক্ত হবে তারপর ঝুরঝুর করে দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে যাবে মাটির ওপর।  তা নিয়ে অবশ্য ওদের কারোরই ভ্রূক্ষেপ ছিল না-অনর্গল কথা বলছিল ওরা চারজন- ছাপা ভয়েল, খড়কে ডুরে, হলুদ সালওয়ার কামিজ,  আর কালো প্যালাৎজো।

আসলে এই সব কথা ওদের মনে বুড়বুড় করে সর্বক্ষণ - ঢাকা দেওয়া হাঁড়িতে ভাত ফোটার মত অনেকটা  - তারপর একসময় কথা ফোটা বন্ধ হয়;  সব কথারা ঠান্ডা হয়ে গিয়ে সর ফ্যালে আলটিমেটলি ; সেই জমাটবাঁধা থকথকে শাদা ফ্যান দিনের শেষে ড্রেনের মুখে নিজেরাই ঢেলে দেয় ওরা; জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলে, শলার ঝাঁটা দিয়ে বাড়তি জল কাচায়, তারপর শুতে যায় সেদিনের মত।
ভ্যাকসিনের লাইনে দাঁড়ানোর গল্পগুলো মরে শাদা হয় নি তখনও- সামান্য গেঁজিয়ে উঠে টক গন্ধ বেরোচ্ছিল মাত্র- বেশিক্ষণ সে গল্প চললে বলার নেশা হয়ে যায়, শোনারও।  এছাড়া যেটা হয়েছিল ভ্যাকসিনের দিনে-  ওরা সামান্য সেজেছিল সবাই। ট্রাঙ্ক খুঁজে ঘটি হাতা ব্লাউজ বের করেছিল প্রথমজন, ছোটো হাতার কামিজ খুঁজে না পেয়ে তৃতীয় নিজেই কামিজের হাতা কেটে হেমসেলাই করে নিয়েছিল। অনেকদিন পরে সেদিন ওরা চুল বেঁধেছিল, খুচরো গয়না , কানের দুল পরেছিল- কোমরে রুমাল গুঁজেছিল। সেই সব গল্প হচ্ছিল।
গল্পে গল্পে বেলা বাড়ছিল। আজও মাথার ওপর রোদ, ভ্যাপসা গরম। আজও ওরা লাইনে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলে ওরা ছ'জন ছিল। মফস্সলের স্কুল। একসঙ্গে সবসময় - স্কুলে যাওয়া, টিউশন, আলু কাবলি , আচার। দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ  কলেজ  অবধি গিয়েছিল। প্রথমের বিয়ে গিয়েছিল স্কুল ছাড়ার বছর দুয়ের মধ্যেই,  আর তৃতীয় পালিয়েছিল পাড়ার এক মস্তানের সঙ্গে। ওদের বাড়ি এবং পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ি ছিল কাছাকাছি, ফলে যোগাযোগ রয়েছে আগাগোড়া-  নিজস্ব মোবাইল ফোন হয়ে যাওয়ার পরে বিশেষতঃ । তৃতীয় এবং মস্তান একটু দূরে পালিয়েছিল তারপর ,তৃতীয়র বাড়ির লোকজন শান্ত হলে, মস্তান কাছাকাছি  পাড়াতেই ডেরা বাঁধে। ওদের মধ্যে চতুর্থই বিয়ের পরে লম্বা উড়ান দিয়েছিল-  সটান আটলান্টিক পেরিয়ে গিয়েছিল বরের সঙ্গে। এই দূরত্বকেই এতদিন ওরা অগম বলে জানত। গতমাসে ষষ্ঠ সেই ধারণা বদলে দিয়েছে।

আজ লাইনে চতুর্থ আর ষষ্ঠ উপস্থিত ছিল না। ষষ্ঠজনের কথা সবার বুক থেকে উঠে গলা বেয়ে মুখে আসছিল, জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিয়ে সে কথা পেটের ভিতরে চালান দিচ্ছিল ওরা প্রত্যেকে। বরং  চতুর্থর কথা হচ্ছিল। ফেসবুকে চতুর্থর পোস্ট করা ছবির গল্প করছিল ওরা- বাড়ি, বাগান, সুইমিং পুল, কুকুর , গাড়ি - এই সব। এর মধ্যে ওদের সঙ্গে চতুর্থর জুম কল হয়েছিল ; চতুর্থর রং এখন যেন ফেটে পড়ে, সামান্য ভারি হয়েছে- কী সুন্দর একটা নীল সোয়েটার পরেছিল, অথচ ওদের সবার সঙ্গে কেমন সুন্দর কথা বলে এখনও-
সেদিন মোবাইলে জুমকলে বসার আগে একটু সেজেছিল ওরা সবাই, ঘরের আলো জ্বেলে দিয়েছিল, ছোটো থালায় গন্ধরাজ রেখেছিল দ্বিতীয়। আঙুল আর নখের হলুদ দাগ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করেছিল। শ্যাম্পু করেছিল সবাই।
আজও সামান্য সেজেছে ওরা। প্রথম আর পঞ্চমের শাড়ি - ফুলফুল ছাপা, খড়কে ডুরে তাঁত। লিপস্টিক লাগিয়েছিল তৃতীয়, মাস্ক সরিয়ে নিজেই দেখাল তারপর হেসে আকুল হল- ওর বিয়ের সময়কার লিপস্টিক নাকি।। " ধ্যাৎ, ঢপ" -হেসে গড়িয়ে পড়ল বাকি তিনজন। দ্বিতীয়র সালোয়ার কামিজের রং পছন্দ হয়েছিল সবার - জিগ্যেস করছিল, কোথা থেকে কিনেছে। ওর কানের ঝুটো দুল নেড়েচেড়ে দেখছিল প্রথমজন তারপর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "পরের মাসে কিনব "
" গানের টিউশন করছিস না আর ?" ফস করে জিগ্যেস করল তিন নম্বর।
-কে আর বাড়ি এসে শিখবে এখন, বল?
- জুমে শেখা
-চেষ্টা করছি ভাই। যারা বাড়িতে আসত, তারা জুমে পারবে না বলছিল।
-কী সুন্দর গাস তুই এখনও। গতবছর মনে আছে, না না তার আগের বছর, পুজোর পরে - ও যে মানে না মানা গাইলি, হৃদয়নন্দনবনে গাইলি-..
-এখন একটু গা না রে
-এই লাইনে দাঁড়িয়ে? কী পাগল মেয়ে তুই! আগের মতই আছিস একদম-
-কোথায় আর! সবই বদলে যাচ্ছে- দ্যাখ কত মোটা হয়েছি, কত্তগুলো পাকা চুল, গালে ছোপ, ছাপ- বর বলে, কিছু একটা মাখলে তো পারো, কত কী পাওয়া যায়-
" তোর বরের ক্যাটরিনা কাইফ চাই এই বয়সে- দু কথা শোনাতে পারিস না?" হেসে হেসেই গলা চড়ালো তৃতীয়।
লাইনের অন্য লোকজন তাকালো, তারপর যথারীতি, চোখ সরিয়ে নিল লাইনের মাথার দিকে।
তৃতীয়ও স্বর নামালো, "তোর ব্লীডিংএর প্রবলেমটা..."
চারপাশে তাকিয়ে প্রথম ফিসফিস করে বলল-" চলছে। সার্জারি করতে হবে। হয়েই যেত..."
"করিয়ে নে এখন। কেস তো কম হচ্ছে। সাধনার মায়েররই তো বড় একটা অপারেশন হল গত সপ্তাহে-"  দ্বিতীয় ঘাম মুছে বলল।
-কে রে সাধনা?
-আমাদের সঙ্গেই পড়ত তো। মনে নেই?
-বাব্বা! কতজনের খবর রাখিস তুই- না রে, এখন হবে না। টাকা পয়সার টানাটানি আছে। আর আমি পড়ে থাকলে ..
"কিছুই আটকে থাকে না- দেখছিসই তো-মা  গেল এভাবে, এক মাস হয়েছে- এর মধ্যেই ফেসবুকে মেয়েদের যা সব ছবি"
ঢোঁক গিলে চুপ করে গেল দ্বিতীয়।

রোদ চড়ছিল।
" কী রে আর কতক্ষণ?" পঞ্চম সম্ভবত এই প্রথম কথা বলল।
"মন্দির খুলে গেলেই, তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে, মনে হয়"- দ্বিতীয় বলল।
"এতক্ষণে তো খুলে যাওয়ার কথা ছিল", পঞ্চম চুপ করে গেল আবার। ঝোলা হাতড়ে জলের বোতল বের করে জল খেল মাস্ক নামিয়ে।
"কাজ হবে তো?" তৃতীয় বলল।
" গ্যারান্টি এক্দম। রত্নাদি , সীমা, শেখরবাবু সবাই বলেছে। টিভিতে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে রোজ। সেইজন্যই বললাম তোদের" প্রথম ঘাম মুছল।
" আসলে বাড়ি বসে বসে, বুঝলি না... এত মেজাজ এত মেজাজ, ড্রিংকও করছে খুব- আর পারছি না রে। এছাড়া আর উপায় নেই বোধ হয়।"
তৃতীয়র মুখের কথা কেড়ে নিয়ে দ্বিতীয় বলল-"আমারও কপাল দ্যাখ। তোদের দাদার কাজ নেই , সন্তু পাশ করে বসে আছে, এ'বছরই চাকরি হয়ে যেত, ইনটারভিউ হয়ে গিয়েছিল,  কোভিডের জন্য আটকে গেল সব-  সংসারে কী যে টানাটানি, কী যে টানাটানি-"
" সব ঠিক হয়ে যাবে" আশ্বাস দিচ্ছিল প্রথম। কোভিডবাবার দেওয়া একটা ফুল -একটা ফুল ভাব তোরা- বালিশের তলায় রাখবি- সাত দিনে সব ঠিক। শেখরবাবুর তো ক্যান্সার ছিল- ভাব তোরা- কী চেহারা হয়ে গিয়েছিল। কোভিডবাবার ফুল পেয়ে, এখন দ্যাখ- আবার পুরোনো চেহারা, পুরোনো মেজাজ, রোজ বাজার যাচ্ছেন।"
 মাথায় হাত ঠেকালো প্রথম-" দেখো ঠাকুর, আর তো পারি না"
" আর পারি না , সত্যি রে। কবে মুক্তি পাবো এসবের থেকে"-দ্বিতীয় বলল।
- ও ও তাই বলত। এখানে এসেওছিল, জানিস? এতক্ষণে পঞ্চম ষষ্ঠের কথা বলতে পেরে যেন শান্তি পেল।
-তুই কী করে জানলি?
-ফোন করেছিল আমাকে। করত মাঝে মাঝে । বলত খুব খাটতে হয়। সেই কবে বিয়ে হয়েছে। এখনও ভোরে উঠে স্নান করে-
"শাশুড়ির জন্য খুব করত শুনেছিলাম", দ্বিতীয় বলে উঠল।
- করত কী রে? শেষদিন অবধি করে গেছে।  ভারি শরীর নিয়ে একতলা তিনতলা সকাল থেকে রাত। ফোনে খুব কেঁদেছিল।
- এখানে এসেছিল, কে বলল?
-  ও ই । আর কে বলবে? বলেছিল, এখানে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলেছিলাম, ভীড়ের মধ্যে যাবি? ভ্যাকসিনের একটা ডোজও হয় নি তোর-
-একটাও হয় নি?
-না। ওর বরের ডাবল ডোজ হয়ে গেছিল, মেয়েদের একটা করে। ওর হয় নি।  সকাল থেকে ভ্যাকসিনের জন্য লাইন দিলে শাশুড়িকে কে দেখবে? খুব কাঁদছিল, জানিস? ঠাকুর আর কত? এবারে মুক্তি দাও বলছিল।
থতমত খেল দ্বিতীয়, " চল ফিরে যাই"
- কেন ? কী হল? শরীর খারাপ লাগছে?
-না রে, ভয় করছে। ও ও মুক্তি চেয়েছিল। এখানে এসেছিল-

মন্দির খুলে গেছে- হৈ হৈ করে একটা রব উঠেছিল এইসময়। হুস করে লাইন এগিয়ে গেল অনেকখানি। ওরা চারজন থতমত খেয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।
-"দিদি, এগোন", পিছন থেকে আওয়াজ উঠল।
প্রথমের হাত ধরে টানল দ্বিতীয়-" না , চল ফিরে যাই"
পঞ্চমও বলল, " ফিরে যাই চল"।
লাইন থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার দিকে হাঁটা দিল চারজন-
-কী করবি এখন?
-বাড়ি, আর কি!
সিনেমা হল ফেরৎ মানুষের মত দেখাচ্ছিল ওদের- পর্দা নেমে গেলে, আলো জ্বলে উঠলে মানুষকে যেমন দেখায়- দিশাহারা আর বিষণ্ণ- যেন অলীক আর বাস্তবের সীমারেখা বুঝে নিতে অসুবিধে হচ্ছে তারপর তা পেরিয়ে যেতে যেটুকু যা বেদনা-

রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছিল। বাসস্টপ পৌঁছতে ঘুরপথ ধরতে হবে। 
" কিছুই হল না তাহলে," প্রথমজন বলল।
"বাড়ি থেকে বেরোনো হল, সাজুগুজু হল আর তোদের সঙ্গে দেখা হল- এই না কত" তৃতীয় উচ্ছ্বল হল সামান্য।
- চা খাবি? দ্বিতীয় ব্যাগ খুলল।
"এই, এখানে একটা নার্সারি আছে জানিস? যাবি? অনেক কিছু রাখে- একবার এসেছিলাম " পঞ্চম আঙুল তুলে দেখাল।
-" কোথায় লাগাব গাছ? তোর মত আমার বাড়ির সামনে জায়গা নেই" দ্বিতীয় বলল।
" গুড আইডিয়া। আমি চারা নেবো -ছাদের টবে পুঁতব। আজকের দিনটা মনে পড়বে।  তুই বারান্দায় ছোটো টব রাখতে পারিস তো" প্রথম সাজেস্ট করল দ্বিতীয়কে।
- আগে রাখতাম টবে দু একটা গাছ। গরমের দিনে তেতে পুড়ে মরে গেছিল। আবার চেষ্টা করব না হয়। চল তবে।
রাস্তা পেরিয়ে নার্সারির সামনে এল ওরা- ফুলছাপ, খড়কে ডুরে, হলুদ সালওয়ার কামিজ, কালো প্যালাৎজো।

ফুটপাথের ওপরেই নার্সারির অফিস ঘর। পিছনদিকটা ডাঁই করা খালি টব-  ছোটো, বড় , মাঝারি। সুপার ফসফেট, বোন  মিল আর পটাশের বস্তা- ওরা ঘুরে ঘুরে দেখছিল। শিকলে বেঁধে বেঁধে শৌখীন পাত্র ঝোলানো, রঙীন ঠোঙায় বীজ, রঙের পিচকারির মতো স্প্রেয়ার, কুন্ডলীপাকানো জল দেওয়ার পাইপ। ছোটো ছোটো মাটির দলায় কাগজ জড়ানো- নাইন ও ক্লক বিক্রি হচ্ছে- হলুদ, বেগুনী রংএর ফুল ধরে আছে অলরেডি। লাল, হলুদ , কমলা ফুল- তিন চার টাকায় এক গোছা- টবে পুঁতে দিলেই হবে। আর একটু এগোলেই দু তিন রকম রঙের জবা- ব্যাঙ্গালোর ভ্যারাইটি বলছিল নার্সারির ছেলে। তারপর জেড প্ল্যান্ট, পিস লিলি।
" এগুলো নিতে পারিস তো"  দ্বিতীয়কে পঞ্চম বলছিল, "ঘরের মধ্যে রাখবি"
- এই গাছটা  সেদিন জুমে দেখলাম না? বিদেশি গাছ হবে।  কী নাম রে? কিছু তো লেখা নেই-
"জানি না। ঐ ছেলেটাকে জিগ্যেস কর-" পঞ্চম হাসল।
-বিদেশে কী সুন্দর ঘর দোর বল! সন্তুর চাকরি হয়ে গেলে ঐ রকম একটা ল্যাম্পশেড কিনব- সেদিন কেমন কমলামতো আলো হয়েছিল ঘরটায়-

এরপর ওরা পেরিয়ে গেল বেগমবাহার, গোলাপ, টবে কারিপাতা, গন্ধরাজ, বেল আর জুইঁএর চারা ছিল, পাশে , বুগেন্ভিলিয়া, ল্যাভেন্ডার, অজস্র পাতাবাহার, স্নেক প্ল্যান্ট। লাল, নীল প্লাস্টিকের টবে ছোটো বড় ক্যাকটাস। বাস্কেটে রজনীগন্ধার কন্দ ছিল। 
প্রথম আতিপাঁতি করে তুলসী গাছ খুঁজছিল।
" এই দেখ লজ্জাবতী" পাতা ছুঁয়ে  দিল পঞ্চম।
-দ্যাখ, কী সুন্দর ঝাউ, নিবি?
-কী সবুজ না?
- কত রকম ফুল রে-নাম ও জানি না-
- কী গন্ধ-ম ম করছে
-সুবাস বল
-কিসের চারা বল তো?
"মুঞ্জরিল মধুর শেফালিকা", প্রথম হেসে ফেলল।
-জবা নিচ্ছি, আর গোলাপ  -ভালো না?
- ঐ বিদেশি চারাটা নিলাম, বেশি দাম নয়।  বাঁচাতে পারব তো রে? এই যা , নাম জানা হল না গাছটার!
"তুই নাম দিস" চোখ মুছে ষষ্ঠর নাম নিল পঞ্চম।

এরপর, চারজন বাড়ি ফিরছিল বাসরাস্তা পেরিয়ে-  হাতের প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে জবা, গোলাপ, জুইঁএর চারা।  বিলিতি চারার পাতার রং লালচে। পাতলা প্লাস্টিকের  নিচের দিকে ক্যাকটাসের অবস্থান বোঝা যাচ্ছিল।
সামনের মোড় ঘুরলেই ওদের চারজনের পথ আলাদা হবে। আলাদা ঘর দোর জানলা দরজা, আলাদা রকম  ঘরের মানুষ। কারো ছাদের টব, কারোর বারান্দায়; ছোটো ঘাসজমিতে চারা পুঁতবে কেউ। কোন্‌ মাটিতে কোন্‌টা বসবে, বাঁচবে কী মরবে- ঠিক নেই।
 
[শিস পত্রিকা ১৪২৮ ]

Comments

Popular posts from this blog

চরাচরের পাখিরা

কোলক্লিফ, ২০২৩

সলস্টিস