Posts

Showing posts from 2016

মৃগদাব

সুখ বলতে সুপর্ণার চোখে একটা ছবি ভাসত -সে ছবির কতখানি সত্য কতখানি মনগড়া না কি পুরোটাই স্বপ্ন -সুপর্ণা জানে না। সুখ ভাবলে কোথাও যেন কিরকির শব্দ করে প্রজেক্টর চালু হয়ে যেত আর একটা সাদা কালো ভিডিও ক্লিপ দেখতে পেত সুপর্ণা- চোখের একদম সামনে। সুপর্ণা দেখত, একটা চওড়া রাস্তা-নতুন সব ঘরদোর তৈরি হচ্ছে একদিকে-পাঁজা পাঁজা ইঁট, সিমেন্ট , বালি, স্টোনচিপসের ঢিপি, ভারা বেঁধে কাজ , অন্যদিকে অজস্র কাশফুল আর মহালয়ার আগের দিন বেলা দশটা নাগাদ মা বাবা আর সুপর্ণা রিকশা করে যাচ্ছে। সে ছবিতে রোদ চড়া নয়-নীল আকাশ ; আর সেই আকাশের নিচে পিচঢালা নতুন রাস্তা ধরে যেন এক গৃহপ্রবেশের নেমন্তন্নে যাচ্ছে সুপর্ণা, যেন ফিরবে সন্ধ্যায় , যেন বিকেলে আর পড়াশোনা নেই তার। তারপর যেন শেষরাতে মহালয়া শুনবে, আর তারপরদিন রবিবার। সোমবারে যেন কোনো ক্লাস টেস্ট নেই বরং পুজোর ছুটি পড়ে যাবে দুপুরে। এব্যতীত গৃহপ্রবেশের নেমন্তন্নের মেনুতে ফিসফ্রাই একথাও যেন জানা গেছে আগেই। একটার পর একটা সুখবোধ, আনন্দ, ভালো লাগা যেন মুক্তোর মালার মত পরপর গাঁথা- যেন কোথাও কোনো ফাঁক নেই, যেন বিষাদ কিংবা দুঃখ ঢোকার কোনো পথই খোলা নেই। ঘটমান বর্তমান আর অদূর ভবিষ্যত ম

কে জানে ক ঘন্টা

বিবিধ প্রকরণ সকাল থেকে মাথায় ঘুরছে তন্নিষ্ঠ শব্দটা বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে এলো যাবেই বা কোথায় এই সব ভাবতেই তন্নিষ্ঠ আউট বিবিধ প্রকরণ ইন কি মনে হয় বলুনতো? জানেন আপনি শব্দগুলো আদৌ সমান্তরাল নয় ৩০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পরস্পর ছুঁয়েছে। এখনও বুঝলেন না কি বলতে চাই? ট্র্যান্স্লেশনের খাতা নয়। জ্যামিতির বই ও নয়। এ যদি আমার প্রেমপত্র হয়, তাড়িয়ে দেবেন? হ্যানসেল তোর কাছে এসেছি আগুন জ্বালাবো বলে। চকমকি পাথরগুলি দুই পকেট ভরে নিয়ে বদলে রাস্তায় ছড়িয়ে দিয়েছি ছেঁড়া রুটি গুঁড়ো গুঁড়ো পাখিরা উড়ে এসে খেয়ে যাক কোনো চিহ্ন যেন না থাকে আগুন নিভে গেলে ছাইগাদায় কুকুরকুন্ডলী রোঁয়াওঠা ধুলোবালি ছেঁড়া কম্বল ভঙ্গুর মাটির ভাঁড়ে পিপাসার জল- ফিরে যাব বলে তো আসি নি এখানে। আল্ট্রা ভায়োলেট সূর্যের হাত খুব লম্বা আকাশ থেকে ছুঁয়ে দিচ্ছে তোমার বারান্দা, ক্যাকটাস, বসবার মোড়া, এলো চুল-  তোমার বুকের ওপর শুধু ছায়াটুকু- তুমি  রেলিংএ হাত রেখে  - ঘাড় ঝুঁকিয়ে ডাকলে-জিমি জনি গ্লসি ফ্লসিইইই- তোমার প্রশ্রয়টুকু বুঝে নিয়ে সরলরেখায় রোদ নামল তোমার গলায়, চিবুকে- তারপর ঠোঁট ছুঁতে গিয়ে  দে

নবারুণপাঠ এবং প্রবাসীর টেখা

হারবার্টের পরে নবারুণ ভট্টাচার্যের আর কোনো লেখা সে ভাবে টানে নি আমাকে। আসলে একটা ভঙ্গুর গোলক নিয়ে সমস্তদিন লোফালুফি তো - ডান হাত থেকে বাঁ হাত, বাঁ থেকে ডান - খুব সাবধানে সারাদিন - পড়ে গেলেই ভেঙে চুরচুর হয়ে যাবে গোলক, অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসবে এ যাবৎ জমাট বাঁধা কুয়াশা, মেঘ, জলকণা - ঘিরে নেবে চারদিক - এই আকাশ, এই গাছপালা, এই সব রাস্তাঘাট। অনন্ত কুয়াশায় পাকদন্ডীতে দাঁড়িয়ে থাকব আমি। সামনে  খাদ। নাম পরবাস। এই সব কুয়াশায় ফ্যান্টাসি খুব জরুরী ছিল। অথচ ফ্যাতাড়ুরা আমাকে টানে নি সেভাবে। সমস্যা হয়েছে পড়তে গিয়ে। নবারুণ বলেছিলেন, তথাকথিত প্রান্তিক মানুষের বেঁচে থাকায়, যাপনে কার্নিভাল দেখেছেন, সেই উদযাপনই ধরতে চেয়েছেন লেখায়। আমি জানি ফ্যান্টাসি বিনা কার্নিভাল হয় না আর বাস্তবের কার্নিভালকে ধরতে গেলে বাস্তবের সীমা তো টপকাতেই হয়। অথচ ফ্যাতাড়ুদের গল্পে একটা প্যাটার্ন পাই আর কার্নিভালে প্যাটার্ন থাকাটা আমাকে সমস্যায় ফেলত।  কিন্তু এই খাদের ধারে এই কুয়াশায় হারবার্ট ছিল। হারবার্ট ছিল বরাবর।  আমার হারবার্ট পাঠে বিস্ফোরণ ও তৎ সংক্রান্ত দর্শনে চমক ছিল, কিন্তু আকর্ষণ ছিল না। বরং একাধিকবার ফিরে যাওয়া ছ

সমরেশের জীবনদেবতা

সন চোদ্দোশো কুড়ির মাঘ মাসের গোড়ায় , এক শনিবারের দুপুরে সমরেশের নিজেকে অসম্ভব সংকটাপন্ন মনে হতে লাগল । জায়গাটা একটা রেলস্টেশন । কলকাতা থেকে শ দুই কিলোমিটার । স্টেশনে সমরেশের পাশে সোহিনী আর দুটো ট্রলিব্যাগ । মাঘের রোদ তেমন কড়া নয় - সূর্যের আলো তেরছা হয়ে শেডের তলায় ঢুকেছে । রেললাইনের একদিকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে সমরেশরা দাঁড়িয়ে , চার পাঁচজন হকার গোল হয়ে বসে আর লাইনের অন্যদিকে কালচে ইঁটের ছোটো ঘর , লম্বা সজনে গাছ - টিনের চালে গোটা দশেক বাঁদর লাফাচ্ছে । আড়াইটে বাজে প্রায় । পাশাপাশি দাঁড়ানো ট্রলিব্যাগ দুটোর লম্বা ছায়া মুড়িওলার পিঠ থেকে সরতে সরতে চা গরমের কেটলিতে পড়ল । কলকাতায় যাওয়ার ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্টও হল তখন । মুড়িওলা তেলের বোতল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠে দাঁড়াল । চা গরম আর সাইড ব্যাগওলা প্ল্যাটফর্মের বাঁ দিকে আর চাবি - তালা - ক্লিপ - চিরুণিওলা ডানদিকে হাঁটতে শুরু করল । আর সমরেশ একটা সিগারেট ধরালো । ও সিগারেট ধরাতেই সোহিনী ওর পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল , ফলে সোহিনীর পা