Posts

Showing posts from January, 2023

সলস্টিস

  সাপ তার ছেড়ে আসা খোলসে আর ঢোকে না। ঢুকতে পারে না।  সেই সব খোলস , শরীরের মাপের সঙ্গে মেলে না, কখনও গভীর ক্ষতচিহ্নও তাতে লেগে থাকে । স্নান সেরে পাঞ্জাবি গলাতে গিয়ে মনে হ'ল। পাটেপাটে ইস্ত্রি করা সাদা পাঞ্জাবিতে সব ক'টা বোতামই লাগানো ছিল;  তিনটে বোতাম খুলে মাথা গলাতেই কাঁধের দিকটা টাইট লাগল- টেনে টুনে বুক অবধি যাও বা গেল , পেটের দিকে নামতে গিয়ে পাঁজরে আটকালো। তখন আয়নায় তাকিয়ে দেখি, পাজামা পরা একটা আধবুড়ো শরীর; ফোলা পেট আর বুকের মাঝখানে আটকে থাকা পাঞ্জাবি ফাঁসতে শুরু করেছে-একটা সাপ যেন তার ছেড়ে যাওয়া খোলসে ঢুকতে যাচ্ছে আর ফেটে ফেটে তারপর গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে শুকনো সাদা চামড়া, আঁশ। খেয়াল করলাম, চশমার তলায় আমার চোখ সরু আর ছুঁচোলো - সাপ দেখলে যেমন হয়।  আসলে,একটা মানুষ কুকুর ভালোবাসে,  তারপর বিড়াল, গরু, ছাগল, খরগোশ, বাঁদর ,বাঘ, সিংহকে ভালোবেসে ফেলে;  কিন্তু, সাপ দেখলে, সে-ই  বদলে যায়- চোখ সরু আর ছুঁচোলো করে লাঠি খোঁজে তখন, কিম্বা আধলা ইঁট। চোখ সরিয়ে  সুটকেশ থেকে টি শার্ট বের করে পরলাম। এই দু বছরে বেশ মোটা হয়েছি। লকডাউনে বাড়িতে বসে কাজ, অনলাইন বাজার,  হাঁটা নেই চলা নেই - সর্বক্ষণ চেয়ারে; ম

রজতজয়ন্তী

  একদল মরা মানুষের মাঝখানে ওদের দেখা যাচ্ছিল; ব্যাকড্রপে তিনরঙা ডোরাকাটা কাপড়ের ওপর আলোর মালার ট্রাফ আর ক্রেস্ট, তার পিছনে বাঁশের খুঁটির আভাস স্পষ্ট বোঝা যায়। এই ল্যামিনেটেড ছবি ওদের দেওয়ালে ঝুলে রয়েছে আজ পঁচিশ বছর;  সন্ধ্যার পরে, টিউবলাইটের আলো রিফ্লেক্ট করলে ছবির মানুষদের ছায়াপিণ্ড মনে হয়; দিনের আলোয় সবার মুখ  আবার স্পষ্ট দেখা যায় , হাল্কা ধুলোর সর নজরে আসে তারপর। তাপস হাত বাড়াল, ছবি পেড়ে এনে আঙুল দিয়ে ধুলো মুছল , তারপর গলা তুলে এক টুকরো পুরোনো কাপড় চাইল। ঝাড়ন কাঁধে ঘরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে স্বাতী দেখছিল, তাপসের আঙুল ধাক্কাপাড় ধুতি, কাজকরা পাঞ্জাবি, জমকালো শাড়ি গয়নার মানুষদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে ওদের দুজনের  রোগা, গাল ভাঙা মুখের উজ্জ্বল হাসিতে দাঁড়িয়ে আছে। " পশ্চিমের আলো ডাইরেক্ট পড়ে তো, রঙ জ্বলে গেছে"- ঘাড় না ঘুরিয়েই তাপস বলল। -পঁচিশ বছর কম না কী। রামকৃষ্ণ ফোটোগ্রাফি ল্যামিনেট করে দিয়েছিল- ফ্রীতে- -তোমার নীরব প্রেমিক ছিল ছেলেটা- -সে আবার কী কথা- - ও দেখলেই বোঝা যায়, হা হা- এখনও কেমন লজ্জা পাচ্ছে দেখ- -হাবিজাবি কথা রেখে স্নানে যাও- -যাচ্ছি। দেখছিলাম...  -ঝুনিদিদি কী সুন্দর ছিল না তখন? ব

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত

  ১ পাহাড়তলির ছোটো শহরে এত গরম বহুদিন পড়ে নি।  ঝলসানো আকাশে কোনো মেঘ নেই, রং নেই; কাক, চিল, ঘুড়ি ওড়ে না;  নিচে ছোটো পাহাড়, নদী, জনপদ- স্কুল, কলেজ, হাট বাজার, স্টেশন, হাসপাতাল।  চৌমাথা পেরিয়ে নেতাজির পুরোনো বাস্ট,  তারপর সরু রাস্তা,  পাশাপাশি দুটো বাড়ি, একচিলতে জমি , ছোটো বাগান - গাছপালা রোদের তাতে নেতিয়ে , পাতা কুঁকড়ে কালচে, ফুল শুকিয়ে পুরোনো ছেঁড়া কাগজের মত দেখাচ্ছে।  দু'দিন হ'ল বাইরে বেরোন অসম্ভব- ফোরকাস্ট  ছিলই, খবরের কাগজে, টিভিতে  বলছিল টেম্পারেচর চল্লিশ ছুঁয়েছে; আমার তো মনে হচ্ছে  আরো বেশি - পঞ্চাশ টঞ্চাশ- যাতে আগাপাশতলা ঝলসে যায় একটা মানুষ । জ্বালা করছিল, চিটপিট করছিল শরীর। সন্ধ্যায় নদীর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস আসে একটা;  আসছিলও বরাবরের মত,  কিন্তু মানুষজনের  যা অবস্থা- নদী টদি দিয়ে হবে না , উত্তরমেরু থেকে হাওয়া আসা দরকার - একদম ডাইরেক্ট।  সকাল থেকেই রোদের তাতে মাথা ঝিমঝিম করে, একটু বেলায় ছাতা , সানগ্লাস নিয়ে অফিস যেতে চোখে সর্ষেফুল দেখি ।  আজ অবশ্য রবিবার।  এই গরমে আজ পাড়াতেই দু’দুটো বিয়ে। মৃদুলা কী সব গিফট টিফট কিনে এনেছে চন্দ্রাদের সঙ্গে গিয়ে। তারপর ঘ্যান ঘ্যান:  কী পরে