Posts

Showing posts from June, 2022

সার্কাসের আলো

  ১ একটা ফিটনেস বলের ওপর শুয়েছিল প্রদীপ্ত। হাওয়াই চটি  সমেত দু' পায়ের পাতা মাটিতে; লম্বা মানুষ হওয়ার সুবাদে হাতের আঙুল মেঝে ছুঁতে পেরেছিল; টী শার্ট ঈষৎ  উঠে গিয়ে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে প্রদীপ্তর- একটা  বড়  টিকটিকি নীল বলে লেপ্টে আছে - এইরকম মনে হচ্ছিল। অথবা দালির সেই সব ঝুলে থাকা চ্যাপ্টা ঘড়ি- পারসিস্টেন্স অফ মেমরি।  এই গোটা ছবিটা রিফ্লেক্টেড হচ্ছে বড় একটা আয়নায় যার সামনে ফিটনেস বলের ওপর প্রদীপ্ত;  আয়না রয়েছে পেল্লাই এক  ঘরে যেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে ডাম্ববেল, বারবেল, ওয়েট সেট, পাওয়ার র‌্যাক, কেজ, ফ্ল্যাট বেঞ্চ, স্কিপিংএর দড়ি, পাঞ্চিং ব্যাগ, ট্রেডমিল , ইলিপ্টিকাল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা দশেক মেডিসিন বল, ফিটনেস বল এইসব। মানে একটা জিম আর কী;  পুরোনো চালু  জিমের পাশে আনকোরা নতুন  আর এক-  শহরের একদম মাঝখানে; পাশেই বড় রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাস- আপ ডাউনের ট্রেন, বাস মফস্সলকে অহরহ কানেক্ট করছে শহরের সঙ্গে - ঠিক যেভাবে প্রদীপ্ত একদিন এসে পড়েছিল আপের ট্রেন ধরে, আর ফিরে যায় নি তারপর। এখানে দেব, রুক্মিনী আসবে আগামীকাল- জিমের উদ্বোধন। অনেক আগেই হওয়ার কথা - করোনার ঝামেলায় এতদিন পিছোলো। আজ সারাদিন ওরা গোছগ

স্বপ্নের ডালপালা

  অগাস্ট ছিল ভ্যাকসিনের মাস। তিনজনের ডাবল ডোজ হয়ে গেছে মাসের গোড়ায়। পঞ্চমজন সেকন্ড ডোজের লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে এসেছিল- শেষ সপ্তাহে আবার যাবে । সেই সব কথা হচ্ছিল। ভ্যাকসিনের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথমের মাথা ঘুরেছিল, আর তৃতীয়র সামনে দাঁড়ানো বুড়ো মানুষ সটান পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল- এই সব কথা। তারপর কে কত ভোরে লাইন দিয়েছিল, বাড়ি ফিরে ভাত বসাতে কত দেরি- এই সব গল্প।  কখনও কথার মাঝখানে সামান্য নীরবতা ছিল- যখন মাস্ক নামিয়ে জল খাচ্ছিল কেউ, কখনও আবার কথার পিঠে কথা উঠে গিয়ে খুচরো কথার মণ্ড তৈরি  হয়ে যাচ্ছিল - মাখা ভাতের মত নরম মন্ড যা কিছু পরেই শুকনো হয়ে শক্ত হবে তারপর ঝুরঝুর করে দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে যাবে মাটির ওপর।  তা নিয়ে অবশ্য ওদের কারোরই ভ্রূক্ষেপ ছিল না-অনর্গল কথা বলছিল ওরা চারজন- ছাপা ভয়েল, খড়কে ডুরে, হলুদ সালওয়ার কামিজ,  আর কালো প্যালাৎজো। আসলে এই সব কথা ওদের মনে বুড়বুড় করে সর্বক্ষণ - ঢাকা দেওয়া হাঁড়িতে ভাত ফোটার মত অনেকটা  - তারপর একসময় কথা ফোটা বন্ধ হয়;  সব কথারা ঠান্ডা হয়ে গিয়ে সর ফ্যালে আলটিমেটলি ; সেই জমাটবাঁধা থকথকে শাদা ফ্যান দিনের শেষে ড্রেনের মুখে নিজেরাই ঢেলে দেয় ওরা; জল দিয়ে ভালো

শূন্য থেকে যাত্রা

  শ্রী অমর মিত্র, সাহিত্যিক, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। শ্রদ্ধাস্পদেষু, লেফাফায় আপনার ঠিকানা লিখতে গিয়ে থমকালাম- কলকাতা লিখব? না কি শুধু পশ্চিমবঙ্গ  লিখলেই হবে? আচ্ছা, পশ্চিমবঙ্গের কোথায়?  শহর না গ্রাম? আয়তাকার সবুজ মলাটের বইটি আবার উল্টে দেখলাম; আপনি লিখেছেন,  " আমি মূলত নগরের মানুষ। এই কলকাতা শহরে সাত বছর বয়স থেকে আছি। এই শহর আমার নিদ্রায় জাগরণে জড়িয়ে থাকে সর্বসময়। ... এই নগরে আমি চোখ মেলতে শিখেছি, এই নগর আমার পা দুটিকে সবল করেছে। দুর্গম গ্রামাঞ্চলে নিঃসঙ্গ বসবাস, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বারংবার পরিভ্রমণ আমাকে দেশ চিনিয়েছে, আমার দেখায় একটি আদল দিয়েছে... ফলে আমার লেখায় নগর এবং নগরের বাইরে পড়ে থাকা জীবন দুই-ই ঘুরে ঘুরে আসে।" এইবার, কলকাতা লিখেও কেটে দিলাম। শুধু পশ্চিমবঙ্গই  লেখা থাকুক - গ্রাম, নগর দুইই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রইল, আপনার লেখার মত।  চিঠি পৌঁছে যাবে ঠিকানায়। দেখুন স্যার, আপনার লেখা নিয়ে বলতে গেলেই আমার দিদার বাড়ির বইয়ের আলমারির কথা মনে পড়ে। দিদার বাড়ির উঠোন থেকে  দুটি উঁচু ধাপ পেরিয়ে বারান্দা ছিল, সেখানে মাটির টবে স্নেক প্ল্যান্টের ডগায়  ডিমের খোলা-  তাতে রং করা মানুষের মুখ-