Posts

Showing posts from May, 2021

গল্পের কাছে

  প্রত্যাশা নিয়ে গল্পের কাছে যাই নি তো। অক্ষরজ্ঞান হয়নি -প্রথম যখন গল্পের কাছে; মা রঙচঙে বই থেকে পড়ে শোনাচ্ছে, সেখানে একটা লাইন- আকাশ ভেঙে পড়েছে রে আকাশ ভেঙে পড়েছে; মা পড়ছে, আর বিশাল একটা কিছু আমাকে গিলে নিচ্ছে, মাথা, মুখ, নাক, কান আর চোখ ঢাকা পড়ছে, দমবন্ধ হয়ে আসছে - এইরকম অনুভূতি হচ্ছে আমার; কিন্তু বিশাল ব্যাপারটা যে কী আর বিরাটত্ব ঠিক কতখানি - সেইটা বুঝতে পারছি না। খাবি খাচ্ছি, তারপর তারস্বরে কেঁদে উঠছি একসময়। অথচ মা কে বারবার বলছি ঐ লাইনটাই পড়তে- ডুবে যাওয়ার অনুভূতি আবার পেতে চাইছি ; মা যখন বাড়ি নেই, বই হাতে আমি ঠাকুমার কাছে যাচ্ছি,তারপর জেঠিমার কাছে, জেঠুর কাছে - বলছি, ঐ লাইনটা পড়- আকাশ ভেঙে পড়েছে রে , আকাশ ভেঙে পড়েছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠছে। সবে পড়তে শিখেছি, স্কুল শুরু হয় নি, জেঠু গল্পগুচ্ছ থেকে 'ছুটি' পড়ছে-এই নিয়ে বোধ হয় পঞ্চমবার- "ফটিক খালাসিদের মতো সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে — এ — এ না। ” আমি আবার সেই খাবি খাওয়া কান্না শুরু করে দিয়েছি, কারণ , এরপর ফটিকের মা আসবে আর ফটিক বলবে, “ মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। ” সম

বই স্মৃতি, বিস্মৃতি, স্মৃতির বই

  একবার একটা লম্বা গল্প পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে মধ্যপথে থেমে গিয়েছিলাম। তারপর আবার শেষ থেকে পড়তে থাকি। সমাপ্তি থেকে গল্পের মধ্যপথে পৌঁছনোর অভিজ্ঞতা পূর্বপাঠের থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে এবং টের পাই, আপ ডাউনের রাস্তা বিলকুল আলাদা। এ' যাবৎ পড়া বই এর স্মৃতির ব্যাপারটা সেরকমই - মাঝপথে দাঁড়িয়ে জীবনের গোড়ার দিকের পড়া বই এর কথা ভাবছি যখন, মাথার ওপর চিলেকোঠার ছাদে অজস্র পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি- মৃত ব্যক্তিরা ফিরে আসছে এক এক করে; এক একটি বই মানে এক একটি সম্পর্ক আর এক এক জন মানুষ। বই যেন নৌকো- বই বেয়ে বেয়ে বৈতরণী পার হয়ে তাঁরা আমার কাছে ফিরছে- দিদা ফিরল পাতলা এক ছড়ার বই চড়ে- লেখকের নাম যতদূর মনে পড়ছে, অণুকণা খাস্তগীর -উৎসর্গপত্রে লেখা ছড়া - "রিমি রিমি ওরে/ এ বই দিলাম তোরে/ বড় হবি যখন / বইটি পড়বি তখন/ আমার আশির্বাদ/ রইল এরই সাথ। দিদা"; আর আমরা দুই বোন অবাক হয়ে ভাবছি, দিদার নাম অণুকণা খাস্তগীর হল কী করে? বীণা হাতে মালা গলায় সরস্বতী ঠাকুর ফিরছে গীতবিতান চড়ে- কাগজের শিকলি টিকলি সমেত- বাঁধানো নীল বই, পাতার ভাঁজে গাঁদাফুলের পাপড়ির ফসিল, শিরদাঁড়ায় চন্দন আর শান্তিজলের ছিটা পড়েছিল- দাগ ধরে গেছে; এইচ

অমৃত্যুর গল্প

  যে সুচিত্রা সেন কিডন্যাপ হয়েছিলেন কুলদা রায় গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন দাম ১২০ টাকা ইদানিং বই নিয়ে হয়তো একটু বেশিই লিখছি। অন্তর্মুখী স্বভাব  এবং আরো নানাবিধ হিজিবিজি কারণে অনেকদিন বই নিয়ে সেভাবে লিখি নি। একই সঙ্গে, গত কয়েক  বছর ব্যক্তিগতভাবে নিজের লেখা, 'লেখক' পরিচিতি নিয়ে অযাচিত সম্মান, প্রশংসা যেমন পেয়েছি, তেমনি বেদনা, কখনও অপমানও। এসবই খুব স্বাভাবিক। একজন স্বল্পপঠিত- র প্রাপ্যই হয়তো । এভাবেই ব্যালান্স বজায় থাকে। মাটির ওপর ভেসে বেড়াতে পারি না, পাতাল প্রবেশও ঘটে না।  অতীতে কিছু লেখার সমালোচনা বা  কাটা ছেঁড়া করে লিখতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে 'লেখক' আমির ছায়া পড়ে- এইটা হলে ভালো হত, তীক্ষ্ণ হত এইসব ভেবেছি, লিখেওছি। অনেকেই পছন্দ করেন নি। পরে আমারও খারাপ লেগেছে। সে চেষ্টা আর করি না। আসলে,লেখা ভালো কী মন্দ সে বিচার  তো আপেক্ষিক। লেখা কালোত্তীর্ণ হবে কী হবে  না সে বিচারও করেন স্বয়ং মহাকাল।  আপাতত, একান্ত কিছু বেদনাবোধ থেকেই খেরোর খাতায় কয়েকটি বইয়ের নাম  টুকে রাখা, পাঠককে জানিয়ে রাখা লেখকের নাম ,যাঁদের লেখা আমার বিচারে অন্যরকম, উল্লেখযোগ্য, অথচ স্বল্পপঠিত। কুলদা রায়কে সেই বিচারে স্বল্পপ