অল অণুগল্পস
অণুগল্প
১
-‘এই লীলা, কাল ফোন
করলি না তো ! রাতের দিকে একটা এস এম
এস করলাম তোকে।
পেন্ডিং দেখালো। মোবাইল
অফ করে রেখেছিলি না
কি?’
-‘হুঁ। শুয়ে
পড়েছিলাম আধখানা ভ্যালিয়াম খেয়ে।‘
-‘মাথা
ধরেছিল?’
-‘সে তো আছেই।
নিত্য সঙ্গী। আসলে
কাল ও এমন অসভ্যতা
করছিল-অসভ্যতাই আর কি বলব-‘
-‘কেন
কি হয়েছে?’
-‘কিছুই
না। কোনো
ইস্যুই নয়। কোথায়
কোন লকে চাবি লাগছে
না, কোথায় কোন ক্যাবিনেটের
হ্যান্ডেল খসে পড়ে গেছে,
আমি তুলে রাখি নি
তাই হারিয়ে গেছে-এই
সব ফালতু ব্যাপার নিয়ে
এমন বিশ্রী ভাবে বলল
যে তুই ভাবতে পারবি
না।‘
- ‘সে
তো আমাকেও, রোজই কিছু না
কিছু , আর সবই নন
ইস্যু। ইচ্ছে
করে সংসারের মুখে ইয়ে দিয়ে
চলে যাই। এই
লোক গুলো যে কি। পুরুষ
বিশেষ করে বাঙালী পুরুষ
মানেই এই। সব
বাড়িতেই তো এক প্রবলেম
শুনি। সত্যি
দেখবি একদিন চলে যাব
সব ছেড়ে।‘
-‘কাল
বলে কি না-কি
কর সারাদিন বাড়িতে, কিছু খেয়াল রাখতে
পারো না? আঙুল নাচিয়ে
নাচিয়ে বলল। আঙুল
তুললে এমনিতেই আমার মাথায় রক্ত
উঠে যায় তার ওপর
এই বয়সে এখন যদি
কি করি করেছি শুনতে
হয়-রাগে মাথা ঝনঝন
করছিল, ওষুধ খেয়ে শুয়ে
পড়লাম।সেদিন
বলল গেট আউট কি
না এক কথা তিনবার
বলেছি। তুই
ভাবতে পারিস শম্পা? নিজের
ওপরই রাগ হয় কেন
পড়ে আছি এখানে।
আর তুই বলিস শংকরের
মেজাজ এর কথা।
রূপকের আসল চেহারা যদি
দেখতি। রেগে
গেলে যা মনে হয়
তাই বলে।ভাবতে
পারবি না।‘
-‘আরে
গেট আউট মানে কি
গেট আউট। আমাকে
তো চুলের মুঠি ধরে
চড়ও মেরেছিল শংকর। ‘
-‘কি বলিস! মেরেছিল তোকে?’
-‘হ্যাঁ,
আমিও মুচড়ে দিয়েছিলাম হাত। ৬
মাস বাড়ি ছেড়ে , পুপুনের
কাছে ছিলাম।‘
-‘থাক
থাক ওসব কথা।
আর ভাবিস না।পরশু আসছিস তো
রূপাইএর জন্মদিনে? এখন রাখলাম।
বেরোবো। রাতে
কথা হবে।‘
শম্পা চিরকাল সেই
রকম রয়ে গেল- কেমন
একটা লো ক্লাস-মারামারি
করে, আবার
সে সব কথা হড়হড়
করে বলে দেয়- ভাবতেই
শিরশির করে আলতো একটা
আনন্দ হ'ল লীলার। রূপকের
নম্বর টিপল –‘শুনছ? ব্যস্ত
নাকি?’
অণুগল্প-২
সুমির
মা বাবা দুজনেরই খুব
ভয়। মেয়ে
বড় হতে থাকলে মা
বাবার যেমন
হয় আর কি। মেয়েকে
ঘিরে তারা সুরক্ষাবলয় গড়ে
তুলেছে দুজনে মিলে।
এই সময় মানে ভোরের
দিকেই সুমি টিউশনে যায়
শ্যামলী দির কাছে -ফিরে
এসে স্কুল। কোনো
পুরুষ শিক্ষকের কাছে কোনদিন প্রাইভেটে
পড়বে না সুমি-যা
সব ঘটনা চারদিকে।
উফ। সুমিকে
বুক দিয়ে আগলে রাখবে
ওরা-সুমির মা বাবা।
সুমির
হাত ধরে শ্যামলীদির বাড়ির
পথটুকু পেরোয় প্রফুল্ল।
মোটের ওপর নিরুপদ্রবেই।
সাধারণতঃ এই সময় গান গাইতে গাইতে
সাইকেলের চেনে তেল লাগায়
গোপাল, সুমিকে দেখলেই গানের
গলা চড়তে থাকে-প্রফুল্লর
তো তাই মনে হয়। লালার
দোকানের ফোঁটাকাটা অল্পবয়সী কর্মচারী দোকানের তালা খোলে, জুলজুল
করে সুমিকে দেখে।
গামছা পরা লোকটা কলতলায় সাবান
ঘষে ঘষে স্নান করে
। টেনশন হয়
প্রফুল্লর। আজ
শীতটা বেশি পড়ায় পথঘাট
শুনশান। হাল্কা
কুয়াশা। খুশি
খুশি লাগে কেমন। শ্যামলীদির
বাড়িতে সুমিকে পৌঁছে বাজারে
যায় সে , বাজার সেরে
মেয়েকে নিয়ে বাড়ি
ফিরবে। স্কুলে
নিয়ে যাবে গীতা, সুমির
মা, সুমির স্কুলেই পড়ায়,
একই সঙ্গে বাড়ি ফিরবে
মা, মেয়ে। এভাবেই
তৈরী হয়েছে সুমিকে ঘিরে
তাদের সুরক্ষা বলয়।
শ্যামলীদি
রিটায়ার্ড টীচার। আজ
সকালে উঠতে দেরি হয়েছে। এখনও
বাথরুমেই। তাঁর
ছেলের বৌ সুমিকে বসতে
বলে রান্নাঘরে যায়। শ্যামলীদির
পড়ানোর ঘরে চেয়ার টেবিল,
পেন পেন্সিল রুলার, চার দেওয়ালে
গম্ভীর মুখে মনীষীরা।
সুরক্ষিত সুমি বসে বসে
টেস্টপেপারের পাতা উল্টোয়।
ঘুম থেকে উঠে আসে
শ্যামলীদির চার বছরের নাতি
। উস্কো
চুল, লাল সোয়েটার- চকলেট
আনলে হত ওর জন্য। আচ্ছা
পরের সপ্তাহেই আনবে না হয়-শনিবার ক্রিসমাস।
বাবাকে বলে একটা ফ্রুট
কেক কিনে আনবে শ্যামলীদি
আর নাতির জন্য।
বাচ্চাটা টলটল পায়ে এসে
দাঁড়ায় তার পাশে।বেবি পাউডার এর
গন্ধ পায় সুমি।
লাল সোয়েটার তার ছোটো ছোটো
হাত সুমির বুকে দেয়
সটান- ‘এখানে দুদু । দুদু
খাবো।‘
অণুগল্প-৩
বৌমা, সুখী কে?
উফ - শুরু হয়ে গেল বুড়োর দর্শন কপচানো। প্রতিদিন এই এক। খেতে বসে যত পুরাণ ধর্ম দর্শনের কথা। ঠক করে ভাতের থালা নামিয়ে রাখে সুপ্তি । তারপর 'বাবা শব্দটা আগে গিলে নিয়ে ভাঙা গলায় বলে ,' আপনার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে ঐ শব্দটা আমার অভিধানে নেই।' তারপর মনে মনে চূড়ান্ত গালাগালি দেয়। জোরে জোরে বললেও বুড়ো শুনতে পাবে না। কানের যন্ত্রটা খুলে খেতে বসেছে। লেবু চিপছে ডালে, ভাত মাখছে।
সুপ্তি বিজবিজ করে বলতে থাকে-'আমার মত মেয়ে বলে এখনও আছে, নইলে কবে চলে যেত সংসারের মাথায় ঝাঁটা মেরে। নোংরা জঘন্য শয়তান একটা। কেন যে আছি ওর সঙ্গে এখনও-নিজের ওপরই ঘেন্না হয় ।'
সুপ্তির শ্বশুর ফোকলা দাঁতে হাসে। কনিষ্ঠা , অনামিকা আলতো চাটে। আবার হাসে।
-'কুলের অম্বলের এমন তার হয়েছে আজ। ঠিক আমার মার মত। কি যেন বলছিলে বৌমা? হারামজাদা আবার ঝামেলা শুরু করেছে?'
সুপ্তি চোখ তুলল। শ্বশুরের তোবড়ানো গালে, পিঠে কাঁধে শীতের রোদ। কাঁসার থালায় অবশিষ্ট অন্ন ব্যঞ্জন। নুন লেবু । মসৃণ লাল মেঝেয় দু ফোঁটা জল, একটা কালো পিঁপড়ে। অম্বলের তার শব্দটা রেণু রেণু হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।
দুপুরের রোদ মিলিয়ে যাচ্ছিল। সুপ্তি মুখ নামালো-আঙুল দিয়ে জলের রেখা আঁকল পিঁপড়েকে ঘিরে। তারপর বলল- 'না বাবা, ভালই আছি।'
উফ - শুরু হয়ে গেল বুড়োর দর্শন কপচানো। প্রতিদিন এই এক। খেতে বসে যত পুরাণ ধর্ম দর্শনের কথা। ঠক করে ভাতের থালা নামিয়ে রাখে সুপ্তি । তারপর 'বাবা শব্দটা আগে গিলে নিয়ে ভাঙা গলায় বলে ,' আপনার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে ঐ শব্দটা আমার অভিধানে নেই।' তারপর মনে মনে চূড়ান্ত গালাগালি দেয়। জোরে জোরে বললেও বুড়ো শুনতে পাবে না। কানের যন্ত্রটা খুলে খেতে বসেছে। লেবু চিপছে ডালে, ভাত মাখছে।
সুপ্তি বিজবিজ করে বলতে থাকে-'আমার মত মেয়ে বলে এখনও আছে, নইলে কবে চলে যেত সংসারের মাথায় ঝাঁটা মেরে। নোংরা জঘন্য শয়তান একটা। কেন যে আছি ওর সঙ্গে এখনও-নিজের ওপরই ঘেন্না হয় ।'
সুপ্তির শ্বশুর ফোকলা দাঁতে হাসে। কনিষ্ঠা , অনামিকা আলতো চাটে। আবার হাসে।
-'কুলের অম্বলের এমন তার হয়েছে আজ। ঠিক আমার মার মত। কি যেন বলছিলে বৌমা? হারামজাদা আবার ঝামেলা শুরু করেছে?'
সুপ্তি চোখ তুলল। শ্বশুরের তোবড়ানো গালে, পিঠে কাঁধে শীতের রোদ। কাঁসার থালায় অবশিষ্ট অন্ন ব্যঞ্জন। নুন লেবু । মসৃণ লাল মেঝেয় দু ফোঁটা জল, একটা কালো পিঁপড়ে। অম্বলের তার শব্দটা রেণু রেণু হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।
দুপুরের রোদ মিলিয়ে যাচ্ছিল। সুপ্তি মুখ নামালো-আঙুল দিয়ে জলের রেখা আঁকল পিঁপড়েকে ঘিরে। তারপর বলল- 'না বাবা, ভালই আছি।'
মাপা !
ReplyDeleteanek dhanyabaad.
ReplyDeleteindrani di ...ektu ektu nijer sathe relate korte parlam :)
ReplyDeleteভালো লাগলো খুব ইন্দ্রানী।
ReplyDeleteFebruary maaser upojukto lekha������. Jite raho Soi
ReplyDeleteaami kaaukei chinate paarachhi naa ken..se Jaai hok, sabaaike anek anek dhanyabaad.
ReplyDelete