১৫/০৮/
ঝাঁ চকচকে সফল ছিলেন না নিরঞ্জন। মানসিক অবসাদ সঙ্গী ছিল। কখনও অসহনীয় স্বাধীনচেতা, পরমুহূর্তেই হয়তো পরমতনির্ভর, সিদ্ধান্তে টলমল।ডায়েরি লেখার অভ্যাস আবাল্য।
নিরঞ্জন নেই। ডায়েরিসমূহও কীটদষ্ট। তবু, আর কোথাও নয়, এই ছেঁড়া খোঁড়া পাতায়, এলোমেলো বাক্যালী-এখানেই রয়ে যান হয়তো। একলা বিষাদময়।
৫/১২/১৯৩৭
টাইফয়েড হয়েছিল বর্ষয়।বেঁচে উঠব ভাবেই নি কেউ। তুলসীতলায় শুইয়ে রেখেছিল নাকি.. আমার জন্য সবাই কাঁদছিল খুব।
গল্পের এই জায়গাটা বারেবারে শুনি-আমার জন্য কাঁদছিল সবাই।
খেতে বসলে বাসন্তী আমার পাতে সব থেকে বড় মাছটা তুলে দেয়, নইলে আমি ওর চুল ছিঁড়ে দি, গুমগুম করে কিল মারি পিঠে। আমার মেজদি। নাম ধরে ডাকি। বাবা মারে, বারণ করে। রাগ হয়ে যায়। কেউ বারণ করলেই রাগ হয়। ভীষণ রাগ হয়।
২০/০৮/১৯৪২
একটা মিছিল আসছিল। নালগোদা যাবে। সচ্চিকে নিয়ে আমি দৌড়ই। হাতের কঞ্চিতে গেরিয়া সাদা সবুজ। গোয়ালভাওড় স্কুলের কাছে সোনাকাকা আমাদের কান ধরে বাড়ি নিয়ে এল।
কেন বারণ করবে? কেউ বারণ করলে জানো না মাথায় রক্ত চড়ে যায় আমার?
আমার বাপের অনেক টাকা, জানো না? বড়লোকের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হবে আমার, আমি বিলাত যাবো।
০৭/০৮/১৯৪৮
গোবিন্দপুর থেকে নৌকায় বরিশাল টাউন। স্টীমারে খুলনা। খুলনা স্টেশন থেকে ট্রেন। মা, পিসিমা, মণি, সচ্চি।
কতদিন লিখি নি। ঘোরের মধ্যে দিন কেটেছে। জমি, বাড়ি বিক্রি, বাবার শ্রাদ্ধ...
ট্রেনে ভীষণ ভীড়
-'জয় হিন্দ, জয় ভারত মাতা' -চমকে দেখি মার চোখ বোজা, জল গড়াচ্ছে.. ট্রেন বর্ডার পেরিয়ে বনগাঁয় ঢুকলো।
তারিখবিহীন
ডাক্তার গাঙ্গুলি,
আপনার কথাতেই ডায়েরির কাছে ফেরা। কাউন্সেন্লিংএ বলেছেন-সব কথা খুলে লিখতে, প্রতিদিন।
কেমন ভয় হয় সব সময়-পারব না, সব ভুল হবে, কেউ বারণ করবে.. সবাই বলে দায়িত্ব এড়ানোর ফন্দি..
খুব চাইতাম , পাশে কেউ থাক যে বুঝবে আমি ভান করি নি-
বিয়ের পর শিপ্রাকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি-মশাট, ভাটোরা, বেড়াচাঁপা; লীভ ভেকেন্সির চাকরি সব-আপনি গেছেন কখনও , ডাক্তার গাঙ্গুলি?
হিন্দি চীনি সৌহার্দ্য কমিটিতে ছিলাম, জানেন? কত কাজ। চাইন্জ অ্যাগ্রেশনে সব বদলে গেল। পার্টি ভাগ হল। ডাঙ্গে, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত-ময়দানে গেছি-আজ এই নেতা কাল সেই নেতা। ময়দানে দাঁড়িয়ে ভয় হত ভীড়ের মাঝে-সোনাকাকা কান ধরে নিয়ে যাবে। কোনো শালা নেতা, পার্টি মিছিল আমার ভয় কাটাতে পারে নি।
একটা ট্রেন ঢুকে পড়ে মাথায়। শিপ্রার খুব কাছে -মুখের কাছে মুখ নামাই যখন -দেখি ওর দু চোখ বোজা। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরা-ট্রেনটা জোরে হুইশল দেয়, বর্ডার পেরোতে থাকে...
শিপ্রা আজ ডালে নুন দিতে ভুলে গেছে। বাটি ছুঁড়ে মেরেছি দেওয়ালে। দেওয়াল গড়িয়ে বসুধারা নামে।
আঙুল দিয়ে চিঠি লিখি হাওয়ায়-শ্রীচরণেষু সোনাকাকা-
৬/১১/১৯৭১
সকালে বিড়ির টুকরো দেখি বারান্দায়। রাতে জানলা দিয়ে দেখলাম- কটা ছেলে শুয়ে আছে। পাশে পাইপগান।
বাজার যাওয়ার পথে সাধন মিস্ত্রিকে বললাম বারান্দায় ইঁট গেঁথে দিতে।
দিনকাল ভালো নয়।
সন্ধ্যে হলেই কারা চেঁচিয়ে বলে যায়-আলো নেভান, আলো নেভান।
/১৯৯৭
বিকেলের দিকটা স্টেশনে এসে বসি। ক্রাচে ভর দিয়ে গান গায় বলরাম -গৌরাঙ্গো আমারো গতি। নিঃশ্বাসগুলো বিসর্গর মতো হয়ে যায় । এক গান এক সুর। প্লাটফর্মে গোটা তিনেক সংসার। এই সময় ভাত ফোটে। ভাতের গন্ধ। কাঁচা লংকা। ওভারব্রিজের ওপর দু জোড়া ছেলে মেয়ে।
এই সময় একটা বাতাস দেয়। কৃষ্ণচূড়া ঝরে। এক নম্বর লাইনে মালগাড়ির শান্টিং। হয়। ইউরিনালের গন্ধ আসে।
তারা ফোটে। সোনাকাকা অ্যানাউন্স করে-বনগাঁ যাওয়ার গাড়ি আপ বনগাঁ লোকাল তিন নম্বর প্লাটফর্মে আসছে।
আমার ফেরার সময় হয়।
নিরঞ্জন নেই। ডায়েরিসমূহও কীটদষ্ট। তবু, আর কোথাও নয়, এই ছেঁড়া খোঁড়া পাতায়, এলোমেলো বাক্যালী-এখানেই রয়ে যান হয়তো। একলা বিষাদময়।
৫/১২/১৯৩৭
টাইফয়েড হয়েছিল বর্ষয়।বেঁচে উঠব ভাবেই নি কেউ। তুলসীতলায় শুইয়ে রেখেছিল নাকি.. আমার জন্য সবাই কাঁদছিল খুব।
গল্পের এই জায়গাটা বারেবারে শুনি-আমার জন্য কাঁদছিল সবাই।
খেতে বসলে বাসন্তী আমার পাতে সব থেকে বড় মাছটা তুলে দেয়, নইলে আমি ওর চুল ছিঁড়ে দি, গুমগুম করে কিল মারি পিঠে। আমার মেজদি। নাম ধরে ডাকি। বাবা মারে, বারণ করে। রাগ হয়ে যায়। কেউ বারণ করলেই রাগ হয়। ভীষণ রাগ হয়।
২০/০৮/১৯৪২
একটা মিছিল আসছিল। নালগোদা যাবে। সচ্চিকে নিয়ে আমি দৌড়ই। হাতের কঞ্চিতে গেরিয়া সাদা সবুজ। গোয়ালভাওড় স্কুলের কাছে সোনাকাকা আমাদের কান ধরে বাড়ি নিয়ে এল।
কেন বারণ করবে? কেউ বারণ করলে জানো না মাথায় রক্ত চড়ে যায় আমার?
আমার বাপের অনেক টাকা, জানো না? বড়লোকের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হবে আমার, আমি বিলাত যাবো।
০৭/০৮/১৯৪৮
গোবিন্দপুর থেকে নৌকায় বরিশাল টাউন। স্টীমারে খুলনা। খুলনা স্টেশন থেকে ট্রেন। মা, পিসিমা, মণি, সচ্চি।
কতদিন লিখি নি। ঘোরের মধ্যে দিন কেটেছে। জমি, বাড়ি বিক্রি, বাবার শ্রাদ্ধ...
ট্রেনে ভীষণ ভীড়
-'জয় হিন্দ, জয় ভারত মাতা' -চমকে দেখি মার চোখ বোজা, জল গড়াচ্ছে.. ট্রেন বর্ডার পেরিয়ে বনগাঁয় ঢুকলো।
তারিখবিহীন
ডাক্তার গাঙ্গুলি,
আপনার কথাতেই ডায়েরির কাছে ফেরা। কাউন্সেন্লিংএ বলেছেন-সব কথা খুলে লিখতে, প্রতিদিন।
কেমন ভয় হয় সব সময়-পারব না, সব ভুল হবে, কেউ বারণ করবে.. সবাই বলে দায়িত্ব এড়ানোর ফন্দি..
খুব চাইতাম , পাশে কেউ থাক যে বুঝবে আমি ভান করি নি-
বিয়ের পর শিপ্রাকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি-মশাট, ভাটোরা, বেড়াচাঁপা; লীভ ভেকেন্সির চাকরি সব-আপনি গেছেন কখনও , ডাক্তার গাঙ্গুলি?
হিন্দি চীনি সৌহার্দ্য কমিটিতে ছিলাম, জানেন? কত কাজ। চাইন্জ অ্যাগ্রেশনে সব বদলে গেল। পার্টি ভাগ হল। ডাঙ্গে, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত-ময়দানে গেছি-আজ এই নেতা কাল সেই নেতা। ময়দানে দাঁড়িয়ে ভয় হত ভীড়ের মাঝে-সোনাকাকা কান ধরে নিয়ে যাবে। কোনো শালা নেতা, পার্টি মিছিল আমার ভয় কাটাতে পারে নি।
একটা ট্রেন ঢুকে পড়ে মাথায়। শিপ্রার খুব কাছে -মুখের কাছে মুখ নামাই যখন -দেখি ওর দু চোখ বোজা। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরা-ট্রেনটা জোরে হুইশল দেয়, বর্ডার পেরোতে থাকে...
শিপ্রা আজ ডালে নুন দিতে ভুলে গেছে। বাটি ছুঁড়ে মেরেছি দেওয়ালে। দেওয়াল গড়িয়ে বসুধারা নামে।
আঙুল দিয়ে চিঠি লিখি হাওয়ায়-শ্রীচরণেষু সোনাকাকা-
৬/১১/১৯৭১
সকালে বিড়ির টুকরো দেখি বারান্দায়। রাতে জানলা দিয়ে দেখলাম- কটা ছেলে শুয়ে আছে। পাশে পাইপগান।
বাজার যাওয়ার পথে সাধন মিস্ত্রিকে বললাম বারান্দায় ইঁট গেঁথে দিতে।
দিনকাল ভালো নয়।
সন্ধ্যে হলেই কারা চেঁচিয়ে বলে যায়-আলো নেভান, আলো নেভান।
/১৯৯৭
বিকেলের দিকটা স্টেশনে এসে বসি। ক্রাচে ভর দিয়ে গান গায় বলরাম -গৌরাঙ্গো আমারো গতি। নিঃশ্বাসগুলো বিসর্গর মতো হয়ে যায় । এক গান এক সুর। প্লাটফর্মে গোটা তিনেক সংসার। এই সময় ভাত ফোটে। ভাতের গন্ধ। কাঁচা লংকা। ওভারব্রিজের ওপর দু জোড়া ছেলে মেয়ে।
এই সময় একটা বাতাস দেয়। কৃষ্ণচূড়া ঝরে। এক নম্বর লাইনে মালগাড়ির শান্টিং। হয়। ইউরিনালের গন্ধ আসে।
তারা ফোটে। সোনাকাকা অ্যানাউন্স করে-বনগাঁ যাওয়ার গাড়ি আপ বনগাঁ লোকাল তিন নম্বর প্লাটফর্মে আসছে।
আমার ফেরার সময় হয়।
Comments
Post a Comment