Posts

Showing posts from April, 2021

ক্রিসমাস ইভ

  ১ ক্রিসমাসের সময় আশ্চর্য রকম ঘন কুয়াশা হয় এই সব দিকে। সন্ধ্যার পর হাইওয়ের ওপর দুম করে কুয়াশা নামলে অ্যাক্সিডেন্টের চান্স খুব বেশি- খাদে উল্টে পড়া গাড়ি দেখিয়ে প্রদীপ চৌহান এই সব বলছিল; তার এক হাত স্টীয়ারিংএ ছিল, অন্য হাত তুবড়ে যাওয়া গাড়ি দেখিয়েই এফ এম এর স্টেশন খুঁজছিল। ভোরের হাল্কা কুয়াশা আধ ঘন্টা হল উবে গেছে; এন এইচ সিক্সটি টু র ওপর প্রদীপের গাড়ি থেকে এখন আরাবল্লীর রেঞ্জ দেখা যাচ্ছে চমৎকার; প্রাচীন আগ্নেয়শিলার ভিজে ভাব কমে গিয়ে আনাচে কানাচে রোদ জমছে - পাথরের রং ঠাহর করা মুশকিল। পাহাড় পেরোলে মাইলের পর মাইল ধূ ধূ প্রান্তরে সবুজের চিহ্নমাত্র নেই- টুকরো টুকরো গাছের গুঁড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে - ঘন কালো রং, ভিতরে ফাঁপা- দূর থেকে মৃত ম্যামথের হাড় পাঁজরের মত লাগে। বিজন আর স্নিগ্ধা ছবি নিচ্ছিল পালা করে। গাবলু এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিল, দেড় ইঞ্চিটাক রোদ ওর কপাল থেকে নেমে চোখে পড়তেই বলল- গল্পটা পড়বে না? স্নিগ্ধা মুড়ে রাখা রাজকাহিনী পড়তে শুরু করল গলা খাঁকরে- -"এদিকে পাহাড়ের উপরে ভাঙা কেল্লায় দুটি বুড়ো আর তাঁদের সেই কুড়োনো মেয়েটি একটি পিদিমের একটুখানি আলোয় মস্ত-একখানা অন্ধকারের মধ্যে বসে গল্প করছেন আর কেল্ল

বকুলকথা

  দূর গগনের সে কোন সুউচ্চ স্তর হইতে স্যাটেলাইট ক্যামেরায় এই অঞ্চলের  চিত্রগ্রহণ করিয়া জুম করিলে একটি বকুলগাছের  নিকট পৌঁছন সম্ভব। চিত্রে ক্ষুদ্র আয়তাকার ক্ষেত্রসমূহ দেখা যায়- যাহা বস্তুত বাটিকার উপরিভাগের আচ্ছাদন, তাহার পর উঠান, চতুষ্কোণ হরিদ্রাভ ক্রীড়াস্থল, বালিকার মলিন রিবনের ন্যায় বিস্তর গলিঘুঁজি; আরো নিকট হইতে দেখিলে একখানি  ঈষৎ কৃষ্ণবর্ণ, কৃশ সরণি, তাহার উপর এক, দুই, তিনখানি একতল অথবা দ্বিতল গৃহ, ভগ্ন প্রাচীর, মরিচা পড়া অপরিসর লৌহফটক। জুম করিয়া  তিন নম্বর প্রাচীরটি অতিক্রম করিলে,  অপরপ্রান্তে পীতাভ হরিৎ  ক্ষুদ্র তৃণভূমি,  নিতান্ত ম্লান নতমুখ করবী, জবা, টগর  এবং একখানি একতল গৃহ;  সম্মুখস্থ  উঠানে ভগ্ন মৃত্তিকাপাত্রে গত রাত্রির বৃষ্টিসলিলে তৃণরাজি , মশককুল  ইত্যাদি শোভা পাইতেছে;   স্থলে স্থলে আস্তর  উঠিয়া গভীর খোন্দল, তাহাতে  দীর্ঘ ধারালো তরবারির ন্যায় তৃণগুচ্ছ, কর্দম,  কত বরষের সঞ্চিত বারি - সামান্য অসাবধান হইলেই আছাড় খাইবার সম্ভাবনা। সর্প দংশনেরও ভয় রহিয়াছে। ফলে এইস্থলে মানুষ নিম্ননেত্রে চলিতে থাকে। তাহার পর  গৃহের সম্মুখে  আসিয়া বকুল ফুলের যে সুবাসে থমকিয়া দাঁড়ায়,  স্যাটেলাইট ক্য

লীলাময়ীর সংসার

  সন তেরোশো ছেষট্টির কবিপক্ষে লীলাময়ী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করতে চেয়েছিল।  হয় সৌমিত্র, নয়ত কাউকেই নয়- বসুশ্রীতে ম্যাটিনি শোয়ে অপুর সংসার দেখার পর লীলাময়ী তার এই ডিসিশন বাড়িতে জানায় ।  বন্ধুদের সঙ্গে স্টুডিওপাড়ায় যাওয়া, ঠিকানা যোগাড় করে সৌমিত্রকে চিঠি দেওয়া - এইসবই সে করেছিল তার যৌবনে; লীলাময়ীর আত্মীয়স্বজন সব জেনে রুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হলেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে সম্পূর্ণ  অন্ধকারে- এ'কথা লীলাময়ীও মেনে নিয়েছিল আলটিমেটলি। তারপর ভুলতে শুরু করেছিল।  গত কয়েকবছর ধরে  সৌমিত্রকে তার মনেপড়ে নি;  বস্তুত, পুরোনো কথা ভাবতে গেলে  এখন  সব গুলিয়ে যায়; এক এক সময় মনে হয়- সে বরফের দেশের মেয়ে, দার্জিলিংএ জন্ম , একটা ঝর্ণার পাশে  যেন তার স্কুল ছিল; এরপর সে জলের আওয়াজ পেতে থাকে- অনেক উঁচু থেকে জল পড়ছে যেন- তার একটি শব্দ মনে পড়ে- পাগলাঝোরা; সে তখন  তা' ঝর্ণার নাম বলে মনে করে, তারপর জল দেখতে পায়;  জল ছিটকোচ্ছে, ছিটকোচ্ছে, জলের ফেনা ঘুরে ঘুরে কোথায় চলেছে; পরক্ষণেই মনে হয়,  যেন তার একটা সাদা কুকুরছানা ছিল ; লীলাময়ীকে দুধ খেতে দেখে সে হাঁ করত আর লীলাময়ী হাত ঢুকিয়ে দিত কুকুরছানার মুখে- লালেঝোলে মা