Posts

Showing posts from 2018

হরেকরকমবা জিবারুদে...

পুনর্মিলন। রিউনিয়ন। বাঁ হাতে রি ইউনিয়ন, ডান হাতে পুনর্মিলন। হাত বদলে বাঁয়ে পুনর্মিলন, ডাইনে রি ইউনিয়ন।  দুই শব্দ নিয়ে লোফালুফি খেললাম খানিক। 'পুনর্মিলন'এ একটি মুহূর্ত মনে এল -সিনেমার মুহূর্ত- কালো সাদা পুরোনো বাংলা সিনেমা-উত্তমকুমার আর মঞ্জু  দে-র  ঘরে এক বিশাল আলমারি ঢোকাতে গিয়ে এক হুলুস্থূল কান্ড আর সে গল্প অনিল চট্টোপাধ্যায়কে বলতে বলতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় হেসে লুটোপুটি-'পুনর্মিলন' হাতে নিলে ঐ হাসিটা। শুদ্ধু ঐ হাসিটা। সাদায় আর কালোয়।   রি ইউনিয়ন নিয়ে লোফালুফি খেলতে খেলতে একটা শব্দ দুটো হয়ে গেল; রি ইউনিয়নের পিঠোপিঠি এসে গেল নস্ট্যালজিয়া।  টুপটুপটুপ করে মুহূর্তগুলি ঝরে গেছে ক'বে-মন তার মালা গেঁথে রেখেছিল- কে জানে  কখন-এক সময়  সুতো ছিঁড়ে  ঝরঝর মুক্তোর দানাগুলি সারা ঘর জুড়ে;   মুহূর্তই তো-স্রেফ একটা পলক-একটা আগুনের ফুলকি অথবা একটা বুদ্বুদ-আছে অথচ নেই- ফুলকি ছোটোবেলায় আমরা বলতাম হরেকরকমবা জিবারুদে রকা রখানা।বঙ্গলিপিতে গোটা গোটা ক'রে  লিখে বলতাম-বলত কি? তারপর কালিপুজোর দুপুরে আমরা বাজিগুলি রোদে দিতাম; ঠাকুমার ঘরে দুইখানি খুব ভারি আয়তক্ষেত্রাকার পিঁড়ি ছ

পয়লা আষাঢ়

রুবির বাঘের নাম শান্তনু। বাঘ যেমন হয়-পেল্লায়, ডোরা কাটা, বিশাল খণ্ড ত ল্যাজ। ভারি বলিষ্ঠ থাবা ঘিরে সাদা নরম রোঁয়া। বিষণ্ণ পোখরাজ চোখ। কানের পিছনে, থাবায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। এখন রাত বারোটায় মোড়ের মিষ্টির দোকানের ঝাঁপ বন্ধ - দু'ধাপ সিঁড়ির নিচে ভাঙা ফুটপাথ-সেখানে এক ছটাক ঘাসের দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি স্ট্রীটলাইট আর জ্যোৎস্নার; দুটো লাল গাড়ি পর পর পার্ক করা। মিত্র সুইটস আর গাড়ির মাঝখানে ঐ জ্যোৎস্নার ওপর হিসি করছিল শান্তনু - আকাশের দিকে মুখ, সামনের দুপায়ে শরীরের সম্পূর্ণ ভর, পিছনের পা ভাঁজ করা এবং লম্বা ল্যাজ মাটির সঙ্গে সমান্তরাল-ওর পিঠের ডোরা এই মুহূর্তের চাঁদের আলোয় সিপিয়া আর সাদা। রুবির হাতে একটা বড় কালো চাদর ভাঁজ করা; সে শান্তনুর পিঠে হাত রেখে সটান দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। রুবি যেন এক বন্ধ দরজার পাল্লা-যার আড়ালে বসে, প্রকৃতির ডাকে নিশ্চিন্তে সাড়া দিচ্ছিল শান্তনু- ঝাঁঝালো বুনো গন্ধ সিঁড়ির ধাপ বেয়ে পৌঁছোচ্ছিল মিত্র সুইটসের সাইনবোর্ড অবধি, ঘাসের ওপর চাঁদের আলো তরল আর হলুদ হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশঃ। রুবিদের গলিটা আদতে জটিল ও প্যাঁচালো- তবে, এর দেওয়ালে ওর দোকানে ঠোক্কর খেতে খেতে শেষ অবধি বড় রাস্তায় পৌ

পিং-পং

সন চোদ্দোশো পঁচিশের  গ্রীষ্মসন্ধ্যা। পিয়ালী আর অনিন্দ্য নিমন্ত্রণরক্ষার জন্য প্রায় তৈরি। পিয়ালী আয়নার সামনে চুল আলতো জড়িয়ে ঘাড়ের ওপর তুলে ফ্রেঞ্চ নট বাঁধছে- দু এক গুছি রুপোলি  রেখা সিঁথির পাশে। অনিন্দ্য রেডি অনেকক্ষণ – তাড়া দিচ্ছে। পিয়ালী শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল-‘এত কিসের  তাড়া!  যাচ্ছ তো হস্টেলের রুমমেটের বাড়ি, মানে আমাদের মতই বুড়ো আর বুড়ি।এক্স গার্লফ্রেন্ড-ট্রেন্ড হলেও বুঝতাম’। অনিন্দ্য ঘরের বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগ্রেট খাচ্ছিল। নিজে নিজেই হাসছিল পিয়ালী-শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে।  ওর হাসি মশকরায়  অনিন্দ্য যোগ দেবে না- পিয়ালী জানে। অনিন্দ্যকে কোনদিন হাসতেই দেখে নি পিয়ালী, রসিকতা করতেও নয়। বস্তুত অনিন্দ্যর খুব খুশি খুশি একটা মুখ পিয়ালী মনেই করতে পারে না। অ্যালবামে ওদের যুগল ছবি, ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ব্যাকড্রপ অথবা সমুদ্রের বালিতে বসে ওরা দুজন, কিম্বা ঘোড়ায় চড়ে  লাল নীল টুপি মাথায় বিট্টু পিট্টু। দুপাশে অনিন্দ্য পিয়ালী। কোনো ছবিতেই অনিন্দ্য হাসিমুখ নয়। একটু আড়ষ্ট যেন,হয়ত সামান্য নতমুখ কোথাও। অথচ  সেই অর্থে অনিন্দ্যর অপ্রাপ্তি কিছু নেই। এই বয়সে ওর মতো ছেলের জাগতিক যা কিছু পাওয়ার সবই 

ক্রায়োনিকস

পবিত্র এই ঘরটায় প্রায় ঘন্টা দেড়েক বসে আছে । শতদল মেসোর বাইরের ঘর - একটা সোফার ওপর কালচে নীল তোয়ালে , তার ওপরে বসে আছে পবিত্র , পায়ের কাছে কচ্ছপ ছাপ জ্বলে জ্বলে যাচ্ছে - সামনের চেয়ারে শতদল মেসো । ঘরে দুটো মোড়া , একটা তক্তপোষ - তাতে মলিন চাদর ; সন্ধ্যে সাতটা হবে - মশারি তোলা হয় নি এখনও ।   ঘরের দেওয়াল নীলচে সবুজ , বড় ঘর ।   একটাই টিউব জ্বলছে - মাকড়শার জাল আর কালো ঝুল টিউবের সর্বাঙ্গে - ঘরের সব কোণে আলো পৌঁছচ্ছে না । আধো অন্ধকারে দুটো রসোগোল্লা চামচ দিয়ে কেটে কেটে খাচ্ছিল পবিত্র । খুব ঠান্ডা রসগোল্লা - শতদল মেসো ফ্রিজ থেকে বের করে দিয়েছে । চামচে সামান্য আরশোলার গন্ধ । পবিত্র একবার শতদল মেসোর মুখের দিকে তাকালো । -' কে তোমাদের বাজার করে মেসো ? কে রাঁধে ? আর কাচাকুচি ? ঘর ঝাড়ামোছা ?' - আসে একজন । অনেকদিন ধরেই কাজ করছে , বুঝলে ? ঝিমলি যখন ছোটো সেই তখন থেকে । তার আবার পা ভেঙেছে , আসছে না কদিন ।   দেখছ না ঘরদোরের অবস্থা !' শতদল মেসো আঙুল দিয়ে নীল সবুজ