Posts

চরাচরের পাখিরা

  এই সব বিকেলে ক্রিকেটম্যাচের শেষটুকু না দেখে চলে যাওয়া অসমীচীন;   যখন রোদ পড়ে আসে, ছায়া দীর্ঘ এবং পূর্বগামী, সঙ্গী বলতে খুচরো কিছু বিষণ্ণতা আর দুশ্চিন্তা, সেই সময়ে পাড়ার মাঠে খেলা চলতে দেখলে, দাঁড়িয়ে পড়েছি। বরাবর। পাড়ার না বেপাড়ার দল, রাউন্ড রবিন না নক আউট , সেমিফাইনাল না কি ফাইনাল জানার প্রয়োজন বোধ করি নি। স্রেফ দাঁড়িয়ে গিয়েছি। ম্যাচের শেষ ওভার যেন এক এসকেপ রুট খুলে দেয়। হয়তো পরপর বাউন্ডারি অথবা সিক্সার, হয়তো একটা রান আউট, কিংবা লং অনের ওপর লোপ্পা ক্যাচ আর তারপরেই খেলোয়াড় আর সমর্থকদের লাফিয়ে ওঠা, স্টাম্প   খুলে নিয়ে মাঠময় দৌড়োতে থাকা - এই সব দৃশ্য এবং মুহূর্তরা   অকারণ উত্তেজনা আর আনন্দের সঞ্চার করে, স্যাঁতস্যাঁতে অনুজ্জ্বল সন্ধ্যার প্রাক্কালে যাকে অভাবিত লাগে তখন। আজ এখন সেই রকমই কিছু ঘটছিল।   বড় রাস্তায় বাস থেকে নেমে তরুণ সঙ্ঘের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটা মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। আসলে, মিতুলদি উবের বা হলুদ ট্যাক্সি নিতে বারণ করেছিল- " অত টাকা ট্যাক্সি কম্পানিকে দেওয়ার কোনো মানে হয়? এখন বুঝবি না, বয়স হলে, অসুখে বিসুখে টাকার মূল্য বোঝা যায়। আর তুই জোয়ান ছেলে- এত বাবুগিরিই বা

কাজলের ঘনত্ব

  কাল রাতে আমি সম্ভবত রামেসিস হয়ে গিয়েছিলাম, আর কেয়া যেন নেফারতরি। অন্তত সেরকমই মনে হয়েছিল তখন। সকালে আবার তত শিওর নই। নিজের থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকেই দেখা তো। তাছাড়া উচ্চতা বদলে যাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল যাতে সংশয় তৈরি হয়। প্রথমে দেখছিলাম, যেন ভিক্টোরিয়ার সামনে বসে গল্প করছি দুজনে; কেয়ার মুখের বাঁ পাশ দেখা যাচ্ছিল - রোদ পড়েছে গালে , ওর কানে ঝোলা দুল, ময়দানের হাওয়ায় হাওয়ায় চুল উড়ছে;  দু হাতে হাঁটু বেড় দিয়ে বসেছে কেয়া- ঘড়ি, হাল্কা গয়না, পায়ের পাতা - চটির স্ট্র্যাপবিহীন; নিজেকেও স্পষ্ট দেখলাম- শরীরের ভার দুহাত মারফত ঘাসে রেখে পা টানটান ছড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের পিছনে ঘন সবুজ ঘাস পেরিয়ে থামওলা অট্টালিকা- ভিক্টোরিয়াই হয়তো- ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে খেয়াল করলাম থামগুলো ক্রমশ উঁচু হচ্ছে -হচ্ছে তো হচ্ছেই- সেই সঙ্গে আমিও লম্বা হয়ে চলেছি, ঘাস টাস, কেয়ার প্রোফাইল কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না। চোখের সামনে শুধু নীল পর্দা সরে সরে যাচ্ছে, যেন একটা গল্পের অতি দ্রুত পট পরিবর্তন ঘটছে- কী হতে চলেছে আন্দাজ করতে না পেরে  পাঠক বিমূঢ় হয়ে পড়ছে ফলত। আমার মাথা টলটল করছিল, মনে হচ্ছিল পড়ে যাব। তারপর লিফট থামার মত ঝাঁকুনি লেগেছিল

দিবসারম্ভে

  সন্দীপদের পুরোনো কোয়ার্টারে গল্প হচ্ছিল শেষ দুপুরে - মায়া, সন্দীপ, রেণু আর আমি। ব্রিটিশ আমলের বাড়ি,  বার কয়েক মেরামতির পরেও বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ । সমুদ্র কাছে হওয়ায়, বাতাসের নুনে ঘরদোর অকালেই বুড়িয়ে গেছে- মায়া আর সন্দীপ তাই বলে। আর সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে ওদের নতুন বাসায় চলে যাওয়ার কথা। এ' বাড়ির দেওয়ালের আস্তর খসেছে যত্র তত্র, সেখানেই ঠেসান দিয়ে ডাঁই করা কার্ডবোর্ডের বাক্স - বেশিরভাগই প্যাকিং টেপ দিয়ে আটকানো;  কিছু এখনও হাঁ করে তাকিয়ে  - গেরস্তালির আরো জিনিসপত্র ঢুকবে। বাক্সের ঘষায় ঘষায় দেওয়াল থেকে আরো চুন বালি ঝরছিল। এই সব দৃশ্য জীবনের অনিত্যতার কথা বলে। সে দিকে পিঠ ফিরিয়ে আমরা মোড়ায় বসেছিলাম।  খাওয়া দাওয়ার পর যেমন হয়- হাতে হাতে জলের বোতল, ঈষৎ হলদে তেলোয় জোয়ান মৌরি দু এক কুচি সুপুরি, দুপুরের ঝিম, কথার পিঠে কথা- অগোছালো আর  দিশাহীন, জানলার পর্দা ঠেলে বহিরাগত হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যায়,  কোথাও পৌঁছোনোর কথাই থাকে না যাদের । ব্যাকড্রপে দেওয়াল ঘড়ির কাঁটা সরে সরে যেতে থাকে, পেঁপে গাছের ছায়া অতিরিক্ত লম্বা হয়ে ঘরে ঢুকে যায় । - চার্লি চ্যাপলিন নাকি একবার চ্যাপলিন লুক অ্যালাইক কম্পি