Posts

Showing posts from 2020

রথসচাইল্ডের জিরাফ

  ১ ঝুপ করে সন্ধ্যা নামল। আলো মরে গিয়ে বেশ ঠান্ডা। এখানে ঈষৎ উঁচুতে দাঁড়িয়ে গাছের মাথা থেকে শিকড়ের দিকে সূর্য নামা দেখা যায়। হঠাৎ হঠাৎ সাদা বক উড়ে যায় পায়ের তলা দিয়ে- তখন সাঁৎ সাঁৎ করে সাইকেল চড়ে কেউ গেল মনে হয় - মাথায় সাদা হেলমেট। আরো নিচে হ্রদ দেখা যাচ্ছিল - নীলচে রং এখন ঘন বেগুণী। জলের নাকি একটা হীলিং পাওয়ার আছে- রেণু কোথাও পড়েছে। শব্দটা যখন উপশম নয়, হীলিং পাওয়ার - মানে ইংরাজি বইতেই পড়েছিল। কিম্বা কোনো কোটেশন- হয়ত হোয়াটস্যাপে। সে যেন পড়েছিল, যত দুঃখ তত জল লাগে হীলিংএর জন্য। কেউ হয়ত টুক করে স্নান করে নিল, কারোর লাগলো গোটা সমুদ্র । আপাতত তার মনের কোনো শুশ্রূষার প্রয়োজন ছিল না - জলের দিকে তাকিয়ে একমনে স্মৃতিকে খেলিয়ে তোলার চেষ্টা করছিল রেণু। সুবর্ণ পাশে দাঁড়িয়ে। কব্জিতে বিয়ের লাল সুতো - হনিমুনে এসেছে ওরা। বঁড়শিতে স্মৃতির টুকরো টাকরা গাঁথলেই রেণু তা টেনে আনছিল - নেড়ে চেড়ে পরখ করে জলে ফেরত পাঠাচ্ছিল, কিম্বা আঁচলে বাঁধছিল, অথবা সুবর্ণর পকেটে ভরে দিচ্ছিল।স্কুলের গেটের সামনের ফুচকা, চুরমুর, হজমিগুলি, বন্ধুরা, ওর তানপুরা, হারমোনিয়াম, ওস্তাদজী, ডোভার লেনে ভোর হচ্ছে- আমজাদ খান সিন্ধু ভৈরবী ধরে

পদ্মের দল

১ এবারে বর্ষার পরে পরিতোষের বাড়ির দরজা সহজে খুলছিল না— কসরতের প্রয়োজন হচ্ছিল রীতিমত। মালিনীর তুলনায় পরিতোষ আগে ফেরে— ফলে ভুগতে হচ্ছিল তাকেই; এই পরের রবিবারেই পুলককে ডেকে চাবি বদলাবে, নতুন লক বসাবে ঠিক— ভেবে নিলেও হয়ে ওঠেনি। সেদিন জ্বর এসেছিল পরিতোষের— ভরদুপুরে বাড়ি ফিরে চাবি ঘোরাচ্ছিল; অফিসে প্রায় দেড় বোতল জল খেয়েছে— তলপেট ফেটে যাচ্ছে, মাথা ছিঁড়ে পড়ছে যন্ত্রণায়— এদিকে দরজা খুলছে না। চাবিই ঢুকছিল না প্রথমে— পরিতোষের মনে হল তবে কি জ্বরের ঘোরে ভুল চাবি ঢোকাল সে— ব্যাগ হাতড়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিল তারপর। ছ ছ বারের চেষ্টায় যাও বা চাবি লকে ঢুকল, তাকে বাঁ দিক ডান দিক কোনওদিকেই ঘোরানো যাচ্ছে না— পরিতোষের মনে হল এইবার ওর প্যান্ট ভিজে যাবে কিংবা দোরগোড়াতেই ধড়াস করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। পাশের বাড়িতে গিয়ে দরজা ধাক্কা দেবে নাকি মালিনীকে মেসেজ করে পুলকের মোবাইল নম্বর চাইবে অথবা ফোন করবে প্রাণের বন্ধু সমরেশকে— অসম্ভব দ্রুততায় ভাবছিল পরিতোষ— প্রবাসী জামাই মেয়েকে ওয়াটসঅ্যাপ করে কোনও লাভ হবে কি না এ চিন্তাও সম্ভবত ঝলক দিয়েছিল ওর মনে, তারপর হেসে ফেলেছিল। এইসময় চাবি ঘুরল, পরিতোষ ঠেলা দিল দরজায়— খুলল না; যেন উল

বৌঠানের ছাদ

বৌঠানের ছাদ দিব্যি রোদ ছিল এতক্ষণ। নরম তরম মাঘমাসের রোদ কাঁধ থেকে ফুটপাথে পিছলে যাচ্ছিল-আমার চাদরের মত;  সেফটিপিন আটকে বাড়ির থেকে বেরোলাম -মেট্রোর ভীড়ে খুলে পড়ে গেছে কখন যেন; আসলে, তাড়াহুড়োয় বড় সেফটিপিনটা খুঁজে পাই নি । সকালে রেডি হচ্ছি- মা কথা বলে চলছিল,ননস্টপ। বলছিল, অন্য একটা চাদর নিতে - শাল টাল। বলছিল, 'বড় বড় লোক আসবে। একটু ভালো জামা কাপড় তো পরলে পারিস, সেই এক ভুষো ভুষো শালওয়ার কামিজ , রোঁয়া ওঠা চাদর, সোয়েটার। কালও তো ওটাই পরে বেরোলি -আবার সিনেমায় গিয়েছিলি, তাই না? ' এই আধা অন্ধকার ঘরে শুয়ে শুয়ে কীভাবে এত কিছু দেখতে পায় -কে জানে! -'বড় বড় লোক এলেই বা আমার কী? তারা যেন আমাকে দেখতে আসছে! সীতাপিসি, মাকে সকালের ওষুধটা দিয়ে দিলাম- দুপুর আর বিকেলেরটা দিও মনে করে। জলের ঢাকার ওপর রেখে যাচ্ছি, বুঝলে। আমি ন’টার মধ্যেই ফিরব। বিছানার চাদর আর বালিশের ঢাকাদুটো একটু বদলে দিও না গো, পিসি।' এদিকে মা বকবক করেই যাচ্ছিল; দু’ তিনবার কাশল- বেশ জোরে। সীতাপিসি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মা'র ঘরে গেল। মেঝেয় ওয়াকার ঘষটে চলার আওয়াজ - বাথরুম টাথরুম যাবে এবারে। টিফিনবক্সে রুটি আর বাঁধাকপ